করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে চার মাস পর আবার তিন হাজারের ঘর পেরিয়ে গেছে, তিন মাস পর মৃত্যু বেড়ে পৌঁছেছে দুই অংকের ঘরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩ হাজার ৩৫৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর, সেদিন ৩ হাজার ৪৩৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
আর এর চেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিল সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর, সেদিন মারা গিয়েছিলেন ১৬ জন। সবশেষ ২১ অক্টোবর ১০ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল, এরপর দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা দশের নিচেই ছিল।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪ হাজার ৬৬৪ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ১২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।
২১ সপ্তাহ পর নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হারও ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গত এক দিনে দেশে মোট ২৭ হাজার ৯২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ। বুধবার এই হার ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ ছিল।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ৩০২ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৯৫৫ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
এই হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৮৬ জন, যা আগের দিন ২১ হাজার ৫৪১ জন ছিল।
গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ২৭৫২ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৮২ শতাংশ। দেশের ৬ জেলায় একদিনে কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১৫; অর্থাৎ ভাইরাসের বিস্তার সারা দেশেই বাড়ছে।
সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় সারাদেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ- এই তিন ভাগে ভাগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ঢাকা ও রাঙামাটিকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’বা লাল জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুই জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে।
শনাক্তের হার ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে থাকা রাজশাহী, রংপুর, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, যশোরকে রাখা হয়েছে হলুদ জোনে। দেশের বাকি ৫৪টি জেলা আছে সবুজ জোনে।
যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ছয় জন পুরুষ, ছয় জন নারী। তাদের মধ্যে আটজন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন একজন করে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে সাত জনের বয়স ছিল ষাটের বেশি। চার জনের বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছর এবং একজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে পরীক্ষা করা ২৭ হাজার ৯২১টি নমুনা মিলিয়ে এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ২২১টি নমুনা।
এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর ১২ জানুয়ারি তা ১৫ লাখ পেরিয়ে যায়। তার আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গতবছর ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছর ৫ ডিসেম্বর কোভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫৫ লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ৩১ কোটি ৭২ লাখের বেশি রোগী।