ড. আতিউর রহমান ||
করোনা সংকট পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকেই এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে রেখেছে। এই ভালো তো, এই মন্দ। একটার পর একটা ভেরিয়েন্ট আসছে। বিশ্বজুড়ে তাই বইছে সীমাহীন অনিশ্চয়তা ও দুর্ভাবনার পাগলা হাওয়া। বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি চলমান এই সংকট ভালোভাবেই সামাল দিয়ে জোর কদমে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার এই সাহসী পদচারণ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও আর্থিক সংস্থার নজরে পড়েছে। সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের ২০২২ সালের অর্থনৈতৈক পূর্বাভাসেও এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ মেলে।
গত বছরের জুনে সরকারের পক্ষ থেকে (জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে) চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ হবে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল। কাছাকাছি সময়েই বিশ্বব্যাংক প্রক্ষেপণ করেছিল ৫.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির। ওই সময়ই আমরা বলেছিলাম করোনাজনিত অর্থনৈতিক স্থবিরতা থেকে উত্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সামর্থ্যের বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। আরো বলেছিলাম যে বছর শেষে (অর্থাৎ ২০২১-এর শেষ নাগাদ) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতিধারা বিবেচনা করে তাদের এই প্রক্ষেপণ বাড়তে পারে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে তারা বলেছে, ২০২১-২২-এ প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ হতে পারে। তার মানে তারা আগের প্রক্ষেপণের চেয়ে ১.৩ শতাংশ বাড়িয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাদের প্রতিবেদনে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার ধারার মধ্যেও বাংলাদেশের বাড়ন্ত অর্থনীতির বিবেচনায় বলা হয়েছে—‘উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়ে থাকবে।’
উল্লেখ্য, ২০২২ এবং ২০২৩-এ পুরো বিশ্বের প্রবৃদ্ধি কমবে বললেও বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণ অনুসারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। আমার নিজের ধারণা, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ নাগাদ প্রবৃদ্ধির হার বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপিত হার ৬.৪ শতাংশের চেয়েও বেশি হবে। আমি অবাক হব না যদি আমাদের বাজেটে প্রক্ষেপিত প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশের খুব কাছাকাছিই তা হয়। তবে তা অনেকাংশ নির্ভর করছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের আক্রমণ কতটা কিভাবে সামাল দেওয়া হবে তার ওপর। বিশেষ করে সর্বশেষ এই আক্রমণের সময়ও আমরা টিকা কার্যক্রম কতটা ক্ষিপ্র এবং কৌশলের সঙ্গে চালু রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে পারব, তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে এই সাফল্য।
এটা এখন প্রতিষ্ঠিত যে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ অন্য বেশির ভাগ দেশের চেয়ে ভালো করছে। আর সামষ্টিক অর্থনীতির এই শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে বিগত ১০-১২ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ ও সেগুলোর বেশির ভাগের সফল বাস্তবায়নের ফলেই। এই পুরো সময় ধরে বাংলাদেশের সরকারের অর্থনৈতিক নীতির তিনটি প্রধানতম বৈশিষ্ট্য ছিল—১. উচ্চ প্রবৃদ্ধিমুখী নীতি প্রণয়নের সময় অন্তর্ভুক্তিকে যথাযথ অগ্রাধিকার দেওয়া, ২. অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি অন্য অংশীজনদের সঙ্গে যুগপৎ কাজ করার পরিবেশ উন্নয়ন এবং ৩. নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার পাশাপাশি উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও নিত্যনতুন প্রযুক্তির কল্যাণমুখী প্রয়োগ উৎসাহিতকরণ।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনেও তাই দেখা যাচ্ছে তারা বলছে, আগামী দিনে বাংলাদেশের সামনে শক্তিশালী ও টেকসই পুনরুদ্ধারের যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তার পেছনে প্রধানত কাজ করছে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা, বেগবান রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বর্ধিষ্ণু শ্রম আয়। উল্লেখ্য, কৃষির লাগাতার সাফল্য, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাফল্যের এই পাটাতন তৈরি করেছে। মনে রাখতে হবে, এই প্রবৃদ্ধির ৬০ শতাংশেরও বেশির ভাগের উৎস আমাদের ভোগ তথা অভ্যন্তরীণ চাহিদা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এই বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে নিতে সক্রিয়। তাই ইপিজেড, হাই-টেক পার্ক ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দিকে সরকারও বাড়তি নজর দিচ্ছে।
আমাদের সামনে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে এটা যেমন স্পষ্ট, তেমনি এটাও সত্য যে এই সম্ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণে গত বছর (২০২১) আমাদের সার্বিক পুনরুদ্ধার সন্তোষজনক হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের নাগরিকরা বিশেষত নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো উল্লেখযোগ্য মাত্রায় চাপের মুখে পড়েছে। অনেক কষ্টে তারা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। শিক্ষিত তরুণদেরও কাজের সুযোগ সংকুচিত করে ফেলেছে করোনা।
এই বাস্তবতায় আগামী ২০২২ সালেও মূল্যস্ফীতিকে একটি সহনীয় মাত্রায় ধরে রাখাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে হয়। তবে আশার কথা, আমাদের রপ্তানি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রেমিট্যান্সও চলতি অর্থবছরে ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হবে বলেই মনে হচ্ছে। কাজেই ব্যালান্স অব পেমেন্ট আবার ইতিবাচক হবে অল্প সময়ের মধ্যে। তাতে ডলার ও টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে। কাজেই করোনার নতুন ঢেউয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের ধাক্কা না খেলে আমাদের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেই মনে হয়। সে জন্য টাকার মান বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে ধীরে ধীরে কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। পারলে বিলাসী পণ্য আমদানি কমনোর জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে। অন্যদিকে রপ্তানির জন্য দরকারি কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের শুল্ক আরেকটু কমিয়ে রপ্তানিকারকদের জন্য বাড়তি উৎসাহ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম তাদের বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদন ২০২২-এ কর্মসংস্থান ও জীবিকার সংকটকে বাংলাদেশের জন্য প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেছে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা আরো আগে থেকেই বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে কর্মসংস্থান তৈরির ওপর জোর দিচ্ছিলেন। তবে এ ক্ষেত্রে আশার কথা এই যে আমাদের নীতিনির্ধারকরাও কিন্তু মধ্যম মেয়াদের মধ্যেই কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধির পরিকল্পনা এরই মধ্যে দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদকালের মধ্যে এক কোটি ১৩ লাখের বেশি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে জন্য মেগাপ্রকল্পগুলোর বেশ কয়েকটি তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করার ওপর জোর দিচ্ছে তারা।
আমাদের মাথাপিছু আয় এই মহামারিজনিত স্থবিরতার মধ্যেও দুই হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১০ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে গড়ে ৪ শতাংশ হারে মাথাপিছু আয় বাড়লেও ২০২১ থেকে ২০২৩-এ এই বৃদ্ধির হার কমে ২ শতাংশ হবে। আমার মতে, এটা প্রত্যাশিতই। কারণ মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিচারে আমরা এরই মধ্যে অবাক করা অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমাদের মাথাপিছু আয়ের ভিত্তি অনেকটাই বেড়েছে। তাই প্রবৃদ্ধির হার একটু কম হতেই পারে। তবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে এই বর্ধিত আয়ের সুষম বণ্টন। আর এই সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য দরকার কাজের সুযোগ বাড়ানো। সমাজের নিচের দিকের মানুষের আয়-রোজগার বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষাও আরো জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি সব ধরনের বিনিয়োগকে বেগবান করার বিকল্প নেই।
আমাদের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের ৮১ শতাংশ আসতে হবে ব্যক্তি খাত থেকে। এ জন্য একদিকে বেশি বেশি বিদেশি বিনিয়োগ ও দেশি বড় আকারের বিনিয়োগ যেমন দরকার হবে, একই সঙ্গে এমএসএমই খাতের বিকাশও জরুরি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন বলছে, বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ পেতে বাংলাদেশের এ মুহূর্তে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাদের মতে, মার্কিন-চীন দ্বৈরথের কারণে বাংলাদেশে এমন বড় বিনিয়োগের প্রবাহ চলমানই থাকবে। তবে আমার মতে, বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় আমাদের যে ইতিবাচক ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে এবং আমাদের ঋণ-জিডিপি অনুপাতও এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। কার্যকর ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি নিশ্চিত করা গেলে মধ্যম মেয়াদে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে আরো বড় উল্লম্ফন সম্ভব বলে মনে করি।
আর দেশজ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের কৃষিসহ এমএসএমই খাতের দিকে আরো বেশি নীতি-মনোযোগ একান্ত জরুরি বলে মনে হয়। আমাদের জিডিপির ২৫ শতাংশ এ খাত থেকে আসছে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে এ অনুপাত ৩২ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রাটিকে খুবই সময়োপযোগী মনে হয় এ কারণে যে একদিকে এই খাতের বিকাশ আমাদের কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মুখ্য ভূমিকা রাখবে (এরই মধ্যে শ্রমশক্তির ৮৬ শতাংশ এ খাতে নিয়োজিত আছে), অন্যদিকে এমএসএমই পণ্য ও সেবা আমাদের বর্ধিষ্ণু দেশজ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানির বাজার দখলের মাধ্যমে অর্থনীতির ভিত্তিকে মজবুত করবে। আশার কথা এই যে এমএসএমই খাতে ধারাবাহিকভাবে নীতি-মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। ২০১৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়কালে এ খাতে ঋণপ্রবাহের কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট ১৩ শতাংশ হওয়াটাই তার প্রমাণ। করোনাকালেও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে এ খাতকে রক্ষা করার সময়োচিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বড় শিল্পের প্রণোদনা বাস্তবায়নের তুলনায় এ খাতের প্রণোদনা বাস্তবায়নের গতি বেশ কম, তাও মানতে হবে। যথাযথ পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে এ সংকটও কাটানো সম্ভব। ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলোর পাশাপাশি দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এমএফআইগুলোর নেটওয়ার্কও এখন এমএসএমই অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর সর্বশেষ আমাদের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জে এসএমইগুলোকে তালিকাভুক্ত করার সহজ শর্ত দিয়ে স্পেশালাইজড ইকুইটি মার্কেটের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা এসএমই অর্থায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এখন আমাদের নিরন্তর নজর রাখতে হবে এসব পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়নের দিকে। কর্মসূচির অভাব নেই। অভাব সময়মতো গুণমানের রূপায়ণের।
সব মিলিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মূল্যায়ন ও পূর্বাভাসগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে যে গণমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ধারাবাহিকতার মধ্যে থাকার কারণে বাংলাদেশ শুধু করোনাজনিত অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবেলায় ভালো করেছে তা নয়, বরং আশু ভবিষ্যতে পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলনামূলক উজ্জ্বলতর মনে হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকিও রয়েছে। কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক বৈষম্য, মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত সংকটগুলোও এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে। এসব ঝুঁকির বিষয়ে সংবেদনশীল থেকে আমাদের সম্ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটি হবে এই ২০২২। করোনা সংকট মেনে নিয়েই আমাদের কৌশলী হতে হবে সব অংশীজনকে সচল রাখার উপায়ের প্রশ্নে। যেমন—সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রীর সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে। তার চেয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের কার্যক্রম শুরুর সময় আলাদা আলাদা করে দিলে গণপরিবহনে যাত্রীর চাপ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানো যাবে বলে মনে হয়। তবে সবাই যেন অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করতেই হবে।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় একটি কথা প্রায়ই বলি বা লিখি। তিনি বলে গেছেন যে ‘টাকার অভাব বড় বিষয় নয়, বরং ভরসার অভাবটিই বড় অভাব।’ আমাদেরও সম্পদের সীমাবদ্ধতা ওই অর্থে নেই। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। কিন্তু বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা ও বৃহত্তর জনগণের মধ্যে একটি ভরসার জায়গা তৈরি করতে পারলেই সেই সম্ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যাবে। সেই ভরসার পরিবেশ তৈরি করার জন্যই আমাদের নীতিনির্ধারকদের আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। সমাজে শান্তি বিরাজ করলে সর্বত্র জবাবদিহি ও সুস্পষ্টতা নিশ্চিত করে দুর্নীতির পথ বন্ধ করা গেলে এবং নারীসহ সবার নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা গেলে সুশাসনের ভিত্তি মজবুত হবে। আর এমন পরিবেশেই সেই ভরসার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। আর তা হলেই আমাদের দেশে বিনিয়োগ বাড়বে এবং অর্থনীতির গতিময়তা আরো প্রবল হবে। আগামী দিনের পথচলা মসৃণ হবে।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর