দেশের
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। গুরুতর অপরাধের ঘটনা উদ্বেগজনক
হারে বেড়ে চলেছে। ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। সমাজের কিছু মানুষও যেন দিন দিন
অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে।
মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের পুরো
সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। ভাবতে অবাক লাগে, দিন দিন এই সমাজ
কোথায় যাচ্ছে? কোন ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা? মানুষ আলোকিত
দিনের অপেক্ষায় থাকে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজও আলোকিত হবে।
মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। এটাই তো কাঙ্ক্ষিত। দেশে শিক্ষিতের হার
বেড়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানবিক উন্নয়ন
কি হয়েছে?
এমন প্রশ্ন আসে কিছু ঘটনা জানার পর। যেমন—রংপুরের পীরগাছায়
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মা-মেয়েকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা ৯৯৯-এ ফোন দিলে ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে
পীরগাছা থানা পুলিশ। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আরেকটি খবরে বলা হয়েছে, ধর্ষণ
মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আরেক
খবরে প্রকাশ, বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক ওয়ার্ড সদস্য ও
তাঁর ভাতিজা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম। এই
ওয়ার্ড সদস্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর ভাতিজা ইউনিয়ন
ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁরা এলাকার বহু অপকর্মের মূল হোতা।
এমন
খবর আরো আছে। শ্রীপুরে ছাত্রলীগ নেতাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
অনেকের পা জড়িয়ে ধরে ছেলের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলেন মা। ছেলেকে বাঁচাতে
পারেননি। রাজধানীর হাজারীবাগে খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে এক কিশোরকে
ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুর সিটির কাশিমপুরের পানিশাল এলাকা থেকে গত
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করেছে
পুলিশ। তাঁর নির্মাণাধীন বাড়ির এক নির্মাণ শ্রমিক ‘টাকা লুটের জন্য’ হত্যা
করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ধারণা করা যেতে পারে, এক শ্রেণির মানুষ
পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ—কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে
না। সামান্য কারণেই যখন খুনের ঘটনা ঘটছে, তখন বলতে হবে মানুষের মধ্যে
অস্থিরতা বেড়ে গেছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে মানুষের
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে
জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ আরো তীব্র হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির
অবনতি ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দেবে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, তুচ্ছ কারণে এসব অপরাধ থেকে উত্তরণ দ্রুত সময়ে
ঘটবে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্যায়কারীর শাস্তি হলে তা দেখে অন্যরা
অন্যায় কাজে নিরুৎসাহ হবে। আর সে কারণেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে
আরো তৎপর হতে হবে। অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।