অপরিহার্য
জ্বালানি গ্যাস এখন শিল্প থেকে শুরু করে যানবাহনে ব্যবহূত হচ্ছে। সম্প্রতি
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণকারী চারটি প্রতিষ্ঠান আবাসিকে ব্যবহূত
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবে দুই চুলার মাসিক বিল দুই
হাজার ১০০ টাকা এবং এক চুলার দুই হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে
দুই চুলার মাসিক বিল ৯৭৫ টাকা ও এক চুলার বিল ৯২৫ টাকা।
এ ছাড়া শিল্পে
প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা
এবং ক্যাপটিভে (শিল্প-কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত গ্যাস) ১৩
টাকা ৮৫ পয়সা থেকে ৩০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই
গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল বিইআরসি। বাসাবাড়িতে দুই চুলার খরচ ৮০০ টাকা থেকে
বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা আর এক চুলার খরচ ৭৫০ টাকা থেকে ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা
হয়েছিল।
চারটি গ্যাস বিতরণ কম্পানি দর বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠালেও এখনই এ
বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। তথ্যের ঘাটতি থাকায় আরো তথ্য-উপাত্ত
চেয়েছে বিইআরসি। সব বিতরণ কম্পানির প্রস্তাব আসার পর বিশ্লেষণ করে নিয়ম
অনুযায়ী গণশুনানির মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করা হয় থাকে।
প্রতিবার গ্যাস বা
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে এ ধরনের গণশুনানি হয়ে থাকে। গণশুনানিতে দাম
বাড়ানোর প্রস্তাব করার আগে বিইআরসি তাদের যুক্তি তুলে ধরে। উৎপাদন ও বিক্রয়
মূল্যের মধ্যে অসামঞ্জস্য ও ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনতে দাম বাড়ানোর কোনো
বিকল্প নেই বলে প্রতিবারই উল্লেখ করা হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, প্রতিবারই
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। শুনানিতে সংশ্লিষ্ট
প্রতিষ্ঠান, বিইআরসি, ভোক্তা প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিয়ে থাকে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ
জানানো হয়।
ভোক্তা অধিকারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, বিইআরসি এক
ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েই গণশুনানির আয়োজন করে থাকে। তাদের মতে, মূল্যবৃদ্ধির
ক্ষেত্রে গণশুনানির বক্তব্য উপেক্ষিত হয়। বিইআরসির গণশুনানি এক ধরনের লোক
দেখানো আনুষ্ঠানিকতা, এমন অভিমত অনেকের। প্রতিবার গণশুনানি শেষে জনযুক্তিকে
পাশ কাটিয়ে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। জনমত কিংবা ভোক্তা
অধিকারের বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে।
অপরিহার্য জ্বালানি গ্যাস এখন
শিল্প থেকে শুরু করে যানবাহনে ব্যবহূত। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মতো
রাষ্ট্রীয়ভাবে জোগান দেওয়া সেবা ও সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা সরকারের
অবশ্যই আছে। তবে জনজীবনে তার প্রভাব কতটা পড়বে, তা অবশ্যই বিবেচনা করতে
হবে। এমনিতেই করোনার অভিঘাতে গত দুই বছরে আমাদের অর্থনীতি বড় ধাক্কা
খেয়েছে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এ
অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শুধু পরিবারে নয়, সামগ্রিকভাবে খরচ বাড়বে।
বেড়ে যাবে জীবনযাত্রার ব্যয়। এই ব্যয় বহন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে কতটা
সম্ভব হবে তা ভেবে দেখা দরকার।
গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আবাসিকে
ব্যবহূত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী গণশুনানি
নিশ্চয়ই হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গণশুনানির অভিমত যেন প্রতিফলিত হয়।