প্রদীপ মজুমদার ।।
কুমিল্লা
লালমাইয়ে কোনোভাবেই থামছে না ফসলি জমির মাটি কাটা। প্রভাবশালীদের
ছত্রছায়ায় একটি মহল দিনরাত অপ্রতিরোধ্য মাটি কাটার মহোৎসব চালাচ্ছে।
গ্রামীণ সড়কে মাটি ভর্তি ট্রাক ও মিনি ট্রাক চলাচল করায় নির্মাণ বা
সংস্কারের দুই বছরের মধ্যেই ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। মাঝে
মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলেও, ঘন্টা খানেক পরে
আবারও তা পুরোদমে শুরু করে মাটি খেকোরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান তারা
তোয়াক্কাই করেনা।
প্রভাবশালীরা কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের তোয়াক্কা না করে
এস্কেভেটর ও কোদাল দিয়ে ডাকাতিয়া নদীর পাড় ও ফসলি জমি থেকে বেপরোয়াভাবে
মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ডাকাতিয়া
নদীর পাড় যেমন ঝুঁকিতে পড়ছে অপরদিকে ফসলি জমির পরিমাণও হ্রাস পাচ্ছে।
অন্যদিকে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং নদী পাড়ের ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে।
জমির
ওপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে
খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ
গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে
করছেন সচেতনরা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১২টি ইটভাটা আছে। যার অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্র নাই।
ইট
তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। এছাড়া
হাতের নাগালে হওয়ায় কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে এ মাটি কিনে নেয় ভূমি
দস্যুরা । এরপর তারা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করে থাকেন।
মাটি বিক্রি
করায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত
হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে এবং অনুজীবের কার্যাবলি আছে তা সীমিত
হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব
শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি ইট
ভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে।
উপজেলার শানিচো
গ্রামের কৃষক আম্বর আলী ও কালাম বলেন, মূলত ফসলি জমির উপরের অংশের মাটি
ইটভাটায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। এতে করে দেড় থেকে দুই বছর ওই জমিতে তেমন ফসল
উৎপাদন হয় না। তবে প্রচুর পরিমাণ জৈব্য সার, খৈল, জিপসাম, ফসফেট ও পটাসসহ
বিভিন্ন সার ব্যবহার করা হলে আগের মতো আবাদ হয়ে থাকে। এছাড়া ৮-১০ ফুট গভীর
করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমিই পরিণত হয়েছে ডোবায়। ফলে দিনদিন কমে যাচ্ছে
আবাদি জমি।
উপজেলার মেসার্স এমরান বিক্সস’র মালিক মো: মহসীন উল হাসান
চৌধুরী (সিপন) বলেন, নদী ও পরিত্যাক্ত স্থানের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করা
হয়। তবে নদীর মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি থাকায় ইট ভালো হয় না। নদীর মাটির
সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ফসলি জমির মাটি মিশিয়ে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
সরজমিনে
গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শেরপুর,হুনকুচা, জয়নগর ডাকাতিয়া নদীর পাড় মাটি
দিনে ও রাতের আধারে কেটে নিয়ে যাচ্ছে , এছাড়া আলীশ্বর, পাড়া ভাবকপাড়া,
শিকারীপাড়া, আমুয়া, জয়কামতা,সৈয়দপুর, বেলঘর, আটিটি,পেরুল, সিলোনিয়া
মেহেরকুল দৌলতপুর (বিল) থেকে ভেক্যু মেশিন ও কোদাল দিয়ে ফসলি জমিসহ মাটি
কেটে ট্রাক্টর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট। নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক সাংবাদিকদের বলেন স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্যান্যদের ম্যানেজ
করেই আমরা এ ব্যবসা করেন করি, দাম্ভিকতার সুরে কথা বলেন মাটি খেকোরা।
অপরদিকে
যন্ত্র দানব ট্রাক্টরের অনভিজ্ঞ চালকের বেপোরোয়া ড্রাইভিংয়ে কেড়ে নিচ্ছে
তাজা প্রাণ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকার গ্রামীণ পাকা সড়ক।
ধুলোয় দূর্ষণে রোগাক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা
জুনায়েদ কবীর খাঁন বলেন, এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় ও ডোবা নালা,পুকুর
পুরনো হতে থাকলে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে। কমপক্ষে ২/৩ বছর ওই জমি থেকে ভালো
ফলন আশা করা যায় না। এতে করে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে।
উপজেলা
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরীন আক্তার বলেন, এখানে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পরিবহন সমস্যা থাকার কারণে অভিযান জোরদার করা
যাচ্ছে না। এছাড়া ফসলি জমি থেকে ইটভাটায় মাটি না নেয়ার জন্য উপজেলা
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়ানো হবে। একটা সময় হয়ত এ সমস্যা থেকে আমরা
পরিত্রাণ পাব।