করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আর শনাক্তের হারে বাংলাদেশ ফিরে গেল ২৫ সপ্তাহ আগের পর্যায়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সোয়া ৪০ হাজারের বেশি পরীক্ষা করে ১১ হাজার ৪৩৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে; এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত বছরের ৯ অগাস্ট, সেদিন ১১ হাজার ৪৬৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
বৃহস্পতিবার ১০ হাজার ৮৮৮ জন নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসাবে গত একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৪৫ জন, বা ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
জানুয়ারির প্রথম দিনও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চারশর নিচে, ৬ জানুয়ারি তা হাজার ছাড়ায়, ১৬ জানুয়ারি পেরিয়ে যায় ৫ হাজারের ঘর, এরপর মাত্র চারদিন পর ২০ জানুয়ারি তা দ্বিগুণ হয়।
শুক্রবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আরও বেড়ে ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ হয়েছে, যা গত বছরের ৪ অগাস্টের পর সর্বোচ্চ। সেদিন শানাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে বাংলাদেশে দিনে রোগী শনাক্তের হার ৩২ শতাংশে উঠেছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসে। তবে ডিসেম্বরে তা ২ শতাংশের নিচে নেমেছিল। জানুয়ারির শুরু থেকেই সংক্রমণের হার হু হু করে বাড়ছে।
মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৭১৫ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ৭৫২ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯৭ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
এই হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ৮০ হাজার ৯২৬ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে।
আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ১৫৭ জন। ১৫ জানুয়ারি ছিল ৩১ হাজার ৭৫৩ জন হয়। অর্থাৎ, মাত্র এক সপ্তাহে সক্রিয় রোগী বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি।
গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৭ হাজার ৯৬১ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৯ শতাংশের বেশি।
এ বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৭২৯৬ জন, গাজীপুরে ১১৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৮৩ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১০১৭ জন, কক্সবাজারে ১২০ জন, কুমিল্লায় ১০৪ জন; রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলায় ১৬০ জন, বগুড়ায় ১১১ জন; খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় ১২৬ জন, যাশোরে ১২৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া সিলেট জেলায় ২৯৯ জন এবং ময়মনসিংহে ১৬১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সাতজন পুরুষ, পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের। দুইজন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগে একজন করে মারা গেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে সাতজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, তিনজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর ১২ জানুয়ারি তা ১৬ লাখ পেরিয়ে যায়। তার আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছর ৫ ডিসেম্বর কোভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫৫ লাখ ৭৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ৩৪ কোটি ২৮ লাখের বেশি রোগী।