তানভীর দিপু:
সড়কে
বিশৃঙ্খলায় কুমিল্লা নগরবাসী নাভিশ্বাস। নগরীর ব্যস্ত সড়কে যানজট যেমন
নিত্তচিত্র, তেমনি এখন কখনো কখনো হাঁটার পথও পায় না নগরবাসী। কান্দিরপাড়,
চকবাজার, টমছমব্রীজ এলাকায় যানজট ছাড়া হাঁটা চলাফেরাও মুশকিল হয়ে দাঁিড়য়েছে
নগরবাসীর জন্য। এসব সমস্যা তো থামছেই না তার উপর যানবাহন নিয়ন্ত্রন,
নজরদারি ও পদ্ধতিগত সমাধানের অভাবে দুর্ভোগ বাড়ছে দিনের পর দিন। জিপির নামে
চাঁদা উত্তোলন, প্রধান সড়কের উপর অস্থায়ী দোকানপাট এবং ফুটপাত দখল এসবের
যেন কোন সমাধান নেই নগর কর্তৃপক্ষের। উল্টো জিপির নামে কৃত্রিম যানজট
অভিযোগ তৈরীর অভিযোগও অহরহ। ট্রাফিক পুলিশে দীর্ঘ দিনের জনবল সংকটও কাটাতে
পারছেনা পুলিশ। বছরখানেক আগের জেলা প্রশাসনের ফুটপাত দখল উচ্ছেদ অভিযান
আলোরমুখ দেখলেও সময়ের সাথে সাথে এসব যেন প্রহসনে পরিনত হয়েছে নগরবাসীর
কাছে।
নগরীর রাজগঞ্জের অধিবাসী বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক আহসানুল কবির
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজগঞ্জ থেকে কান্দিরপাড় যেতে পঁচ মিনিটের পথ
আধাঘন্টা রাগে। এটা কোন কথা! আর রাস্তা দখল করে দাঁড়ানো এক শ’ হকার মনে হয়
দশ লাখ মানুষের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তাদের নিয়ে প্রশাসনের কোন সমাধান নাই।
রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ সবাইকে
সমন্বিত ভাবে কাজ না করলে এই দুর্ভোগের শেষ হবে না।
কুমিল্লা নগরীতে
দিনের পর দিন বাড়ছে জনসংখ্যা। ৫৩ বর্গ কিলোমিটারের এই নগরীতে ভোটার
সংখ্যার তুলনায় মোট জনসংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেশি। জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়ছে
জববহুল এলাকাগুলো ঘিরেই। একই এলাকায় দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবে
বাড়ছে যানবাহন। রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজি, প্রাইভেটকার-মাইক্রো, মোটরসাইকেলও
বাড়ছে দিন দিন। একই সাথে বেড়েছে সড়কের পাশে অস্থায়ী দোকানপাট ও হকার।
কিন্তু একই রয়ে গেছে সড়কের পরিমান। উল্টো দখলদারিত্বে সংকীর্ণ হয়েছে প্রধান
সড়কগুলো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা
কান্দিরপাড়, চকবাজার, রাজগঞ্জ, শাসনগাছা, টমছমব্রীজ, ঝাউতলাসহ অন্যান্য
এলাকাগুলোতে তৈরী হয়েছে অপ্রয়োজনীয় সিএনজি, ইজিবাইক ও এ্যাম্বুলেন্স
স্ট্যান্ড। সড়ক কিংবা ট্রাফিক আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই এসব
স্ট্যান্ডগুলো দখল করে রাখে সড়কের বেশির ভাগ অংশ। স্ট্যান্ড সৃষ্টির নামে
চাঁদাবাজির অভিযোগও অনেক পুরোনো। রাস্তার দুই পাশে এমন স্ট্যান্ড তৈরী করে
রাখলে বাকি চলাচলের পথ কতটুকু খালি থাকে তা জানা আছে সবারই। তবে এসব চোঁখে
পড়ে না নগর কর্তৃপক্ষের। খোদ যানবাহন চালকদেরই অভিযোগ, নগরীতে চলছে ধারণ
ক্ষমতার বেশি যানবাহন। শহরের বাইরে থেকেই আসে এসব যানবাহন। প্রয়োজনের
তুলনায় এই যানবাহনের সংখ্যা বেশি বলেই মনে করেন তারা। যে কারনেই স্ট্যান্ড
তৈরী করে অপেক্ষা করতে দেখা যায় যানবাহনগুলোকে।
অন্যদিকে যানবাহন চলাচলে
প্রতিবন্ধকতা শুধু নয় এখন পথচারীদের চলাচলেও পদে পদে বাঁধা। কান্দিরপাড়ের
চিত্রই যেন হারায় মানায় কোন লোকারণ্যকে। দুই পাশের ফুটপাত দখল হওয়ায়
পথচারীদের হাঁটতে হয় সড়কের উপর দিয়ে। দুই দিকেই চলাচলকারী পথচারীদের
মুখোমুখি ধাক্কা খেয়েই পথ চলতে হচ্ছে। করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে
যেখানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার কথা সেখানে সাধারণ পথ চলাতেই নগরবাসীকে
গাঁ ঘেষে চলতে হচ্ছে। রানীর দিঘীর পাড়ের বাসিন্দা অমিত মজুমদার জানান, কেউই
ব্যাক্তিগত গাড়ী নিয়েই বের হতে চান না। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে হেঁটে চলাই
অসম্ভব হয়ে দাঁিড়য়েছে। ফুটপাত থাকে হকারের দখলে আর সড়ক থাকে অতিরিক্ত
যানবাহনের দখলে। সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের সমন্বিত
উদ্যোগের অভাবে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী।
কুমিল্লা
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক এমদাদুল হক জানান, যে পরিমাণ ট্রাফিক পুলিশ
কুমিল্লা নগরীতে নিয়োজিতন আছেন তা পর্যাপ্ত নয়। আরো অন্তত অর্ধশত ট্রাফিক
পুলিশ সদস্যের বরাদ্দ চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, শীঘ্রই ফুটপাথ ও সড়কের
দখলদার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। নির্বাচনের কারণে প্রাশসনের নির্বাহী
ম্যাজিষ্ট্রেট এবং পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এই
পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ
সদস্যও এই ব্যাপারে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।