ক্রীড়া
প্রতিবেদক: অল্প পুঁজি নিয়েও শক্তিশালী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে কাঁপিয়ে
দিয়েছিল সিলেট সানরাইজার্স। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় মাত্র ৯৬ রানে অলআউট
হলেও, স্পিনারদের কল্যাণে ম্যাচটি প্রায় জিতেই গিয়েছিল সিলেট। তবে শেষ
পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা
ভিক্টোরিয়ানস।
অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল
ইসলাম অপু এবং আরেক অফস্পিনার সোহাগ গাজীর ঘূর্ণিতে মাত্র ৮৮ রানেই
কুমিল্লার ৮ উইকেট তুলে নিয়েছিল সিলেট। কিন্তু পেসাররা সে অনুযায়ী কার্যকরী
বোলিং করতে না পারায় ২ উইকেটে হেরে গিয়েছে তারা।
৯৭ রানের ছোট লক্ষ্য
তাড়া করতে নেমে তাসকিনের আহমেদের করা প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা
হাঁকান কুমিল্লার ওপেনার ক্যামেরন ডেলপোর্ট, সেই ওভারে আসে ৮ রান। তবে পরের
দুই ওভারে রান নিয়ন্ত্রণে আনেন সোহাগ গাজী ও তাসকিন।
চতুর্থ ওভারে
প্রথম বলেই কুমিল্লার তারকা ওপেনার ফাফ ডু প্লেসিকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন
গাজী। আউট হওয়ার বিপিএলে নিজের প্রথম ইনিংসে ৭ রান করেন ডু প্লেসি। তিন
নম্বরে নেমে মুখোমুখি তৃতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকান মুমিনুল হক।
পরের
ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসেন সিলেট অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
তিনি খরচ করেন মাত্র ১ রান। পাওয়ার প্লের প্রথম ৫ ওভারে হয় মাত্র ১৯ রান।
তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে চাপ কিছুটা কমান
মুমিনুল, সেই ওভারে আসে ৯টি রান।
তাসকিনের সঙ্গে নতুন বল ভাগাভাগি করে
নেওয়া গাজীকে টানা চতুর্থ ওভারে করিয়ে ফেলেন মোসাদ্দেক। ইনিংসের অষ্টম ও
নিজের শেষ ওভারে দুই চার ও এক ছয়ের মারে ১৪ রান খরচ করে ফেলেন গাজী। ওভারের
প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তৃতীয় বলে সাজঘরে ফিরে যান ১৬ রান করা
ডেলপোর্ট।
পরে উইকেটে এসেই প্রথম বলে চার মারেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল
আর ছক্কা দিয়ে শেষ করেন গাজীর স্পেল। সেই ওভারে আসা ১৪ রান কুমিল্লার ওপর
থেকে চাপ কমিয়ে দেয় অনেকটা। কিন্তু তাদেরকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে দেননি
মোসাদ্দেক।
ইনিংসের নবম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে প্রথম বলেই ১৫
রান করা মুমিনুলকে ফেরান সিলেট অধিনায়ক। এক বল পর রবি বোপারার দারুণ ক্যাচে
সাজঘরে ফেরেন ৪ বলে ১০ রান করা ইমরুল। মাত্র ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কঠিন
চাপে পড়ে যায় কুমিল্লা।
কুমিল্লার বিপদ আরও বেড়ে যায় দলীয় ৫৫ রানের
মাথায় আরিফুল হকও সাজঘরে ফিরলে। প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই ৪ রান করা
আরিফুলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন নাজমুল ইসলাম অপু। যিনি এবার নাগিন
উদযাপনের বদলে দেখান 'পুষ্পা' উদযাপন।
এরপর কুমিল্লা শিবিরে আশার আলো
জ্বালেন আফগান অলরাউন্ডার করিম জানাত। পাঁচ নম্বরে নামা নাহিদুল ইসলামকে
নিয়ে মাত্র ৩.১ ওভারে ২৭ রান যোগ করেন জানাত। যেখানে তার অবদান ১৩ বলে ১৮
রান। জয় যখন দৃষ্টিসীমানায়, তখন আউট হয়ে যান আফগান তারকা।
ইনিংসের ১৪তম
ওভারে জানাতকে সাজঘরে পাঠিয়ে সিলেটকে ম্যাচে ফেরান তাসকিন। পরের ওভারে আরেক
সেট ব্যাটার নাহিদুলকে আউট করেন নাজমুল অপু। দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থেকে এক
ছক্কার মারে ১৬ বলে ১৬ রান করেন নাহিদুল। তার বিদায়ে ৭ উইকেটে ৮৪ রানের দলে
পরিণত হয় কুমিল্লা।
শেষ ৫ ওভারে তিন উইকেট হাতে রেখে কুমিল্লার জয়ের
জন্য প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। তাদের আশার প্রতীক হয়ে খেলছিলেন শেষ স্বীকৃত
ব্যাটার মাহিদুল ইসলাম অংকন। কিন্তু অপরপ্রান্তে বড় শট খেলতে গিয়ে ৯ রান
বাকি থাকতেই আউট হয়ে যান শহিদুল ইসলাম।
নাজমুল অপুর স্পেলের শেষ ওভারে
লং অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন শহিদুল। সীমানায় থাকা রবি বোপারা নিজের
বাম দিকে বেশ খানিক পথ দৌড়ে ঝাঁপিয়ে লুফে নেন সেই ক্যাচ। ফলে ৮৮ রানেই পতন
ঘটে অষ্টম উইকেটের। তবু টিকে ছিলেন মাহিদুল।
প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ৮ রান
দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া মোসাদ্দেক নিজের স্পেল শেষ করতে আসেন ১৮তম ওভারে।
মাত্র ২ রান খরচ করে শেষ ওভারের জন্য ৬ রান রেখে যান সিলেট অধিনায়ক। কিন্তু
সেটি আর রুখতে পারেননি ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার কেসরিক উইলিয়ামস।
তার করা
১৯তম ওভারের প্রথম চার বলে চারটি সিঙ্গেল নিয়ে নেন তানভীর ইসলাম ও মাহিদুল
অংকন। জয়ের জন্য যখন বাকি দুই রান, তখন পরপর দুইটি ওয়াইড দিয়ে কুমিল্লার জয়
নিশ্চিত করে দেন কেসরিক। শেষ পর্যন্ত ৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন অংকন।
সিলেটের
পক্ষে বল হাতে ১৭ রানে ৩ উইকেট নেন নাজমুল অপু, মোসাদ্দেক সৈকত মাত্র ১০
রান খরচায় নেন ২টি উইকেট। আরেক স্পিনার সোহাগ গাজী ২ উইকেট নিলেও চার ওভারে
খরচ করেন ৩০ রান।
এর আগে প্রথম দিনের দুই ম্যাচের মতো আজও টস জিতে
ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
প্রতিপক্ষের আমন্ত্রণে খেলতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে
থাকে সিলেট।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দলের মাত্র ৭ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৩
রানে সাজঘরের পথ ধরেন এনামুল হক বিজয়। আরেক ওপেনার কলিন ইনগ্রাম আউট হন
পাওয়ার প্লে'র শেষ ওভারে। তবে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ইনগ্রাম।
তার ব্যাট থেকে ২১ বলে আসে মাত্র ২০ রান।
এরপর হতাশ করেন মোহাম্মদ মিঠুন
(৫), অধিনায়ক সৈকত (৩), অলক কাপালি (৬), মুক্তার আলিরা (০)। ইংলিশ
অলরাউন্ডার রবি বোপারা ১৯ বলে ১৭ এবং স্থানীয় অফস্পিনিং অলরাউন্ডার সোহাগ
গাজী ১৯ বল খেলে করেন ১২ রান। আর কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
কুমিল্লার
পক্ষে বল হাতে নাহিদুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ও শহিদুল ইসলাম। বাঁহাতি
স্পিনার তানভির ইসলাম ১ উইকেট নিলেও চার ওভারে খরচ করেন মাত্র ১০ রান।
মোস্তাফিজ ও শহিদুল দিয়েছেন সমান ১৫ রান করে।