এবিএম আতিকুর রহমান বাশার:
কুমিল্লার
দেবীদ্বারে ইউপি নির্বাচনের প্রচারণাকালে ইউসুফপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ
মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কবির হোসেনের সমর্থকদের সাথে স্বতন্ত্র
প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের অধ্যাপক মোঃ মাজহারুল হক মামুনের সমর্থকদের
সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নৌকা প্রতীকের সমর্থক সুরুজ মিয়া নামে এক ব্যক্তি
নিহত হয়েছেন। নিহত সুরুজ মিয়া ইউছুফপুর প্রামের মৃত: দিল্লু আলীর পুত্র। এ
ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারমান প্রার্থীর
প্রাইভেট কার ভাংচুর করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া
৯টায় ইউছুফপুর দানিস মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই মাকের্টের একই
বিল্ডিং- এ পাশাপাশি নৌকা ও ঘোড়া প্রতীকের নির্বাচনী অফিস রয়েছে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন নৌকা সমর্থক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সরকার, ঘোড়াা প্রতীকের সমর্থক হাবিব মামুন ও মোরশেদ।
নিহতের
বড় ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ইউছুফপুর গ্রামের হালিম পুলিশের
পুত্র তার বাবাকে ধাক্কা দিলে তার বাবা অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। পরে তাকে
দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে
মৃত: ঘোষণা করেন।
দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে
দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান সিকদার বলেন, নিহত ব্যক্তির
শরীরে কোন জখম বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হামলায় আহত মোঃ
কবির হোসেন বলেন, নিজ নির্বাচনী এলাকার মহেশপুর গ্রামে প্রচারনা শেষে রাত
৯টায় ইউছুফপুর ‘দানিস’ মার্কেটে আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে আসার পথে
স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ঘোড়া’ প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক মোঃ মাজহারুল
হক মামুন’র সমর্থক হালিম পুলিশসহ একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী লাঠি, রড, ছোরা,
সাবল নিয়ে আমাকেসহ আমার সমর্থকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়, এসময়
হামলাকারীরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করলে গাড়ির বাম পাশের গ্লাস
ভেঙ্গে বাম চোখের পাশে সাবলের আঘাত লেগে রক্তক্ত ও জখম হই। এসময় হালিম
পুলিশের ছেলে হাসান’র লাঠির আঘাতে আমার সমর্থক সুরুজ মিয়া(৫০) অচেতন হয়ে
পড়েন। তাকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর কর্তব্যরত
চিকিৎসক তাকে মৃত: ঘোষণা করে। হামলায় আমার অপর এক সমর্থক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের
সভাপতি সুমন সরকারও আহত হয়।
অপর দিকে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ঘোড়া’
প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক মোঃ মাজহারুল হক মামুন সেল ফোনে জানান, গতকাল
আওয়ামীলীগের এক নির্বাচনী সভায় জেলা নেতৃবৃন্দরা দলের স্থানীয়
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেযান,- ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি, সাধারন সম্পাদকসহ
সকল নেতা- কর্মীরা নৌকার বিরোধী প্রার্থীর সমর্থক। যারা নৌকার বিরুদ্ধে
কাজ করছেন তারা আজকের মধ্যে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নিলে, তাদের
বিরুদ্ধে দলীয় শৃংখলা বিরোধী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাত ৯টায় ইউছুফপুর
‘দানিস মার্কেটে আমার নির্বাচনী কার্যালয় থেকে আমার গাড়িযোগে ইউনিয়ন আ’লীগ
সভাপতি আবু তাহের সরকার, সহ-সভাপতি শাহআলম মূন্সী, উপদেষ্টা হালিম পুলিশ,
যুবলীগ নেতা হাসানসহ কয়েকজন আমার বাড়িতে আসার পথে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা
তাদের উপর হামলা চালায় এবং নৌকার পক্ষে কাজ করতে গাড়ি থেকে জোরপূর্বক
নামিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। তারা গাড়িতে হামলা করে গাড়িটি রাস্তার পাশে
নামিয়ে দেয়। এসময়
সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে
যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনার এক ঘন্টা পর শুনতে পাই, ঘটনাস্থলের
অদূরে সুরুজ মিয়া হার্ট এটাকে মারা গেছেন। সুরুজ মিয়ার মৃত্যুকে নিয়ে নৌকার
প্রার্থীরা হত্যা বলে রাজনীতি করছে। দরিদ্র সুরুজ মিয়া হার্টের রোগি, তিনি
এর আগেও ষ্ট্রোক করেছেন, তিনি চোখে কম দেখেন, তার চিকিৎসায় আমিও টাকা দিয়ে
সহযোগীতা করছি। গত পরশুদিন ঢাকায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়িতে আসেন।
উল্লেখ্য আগামী ৭ ফেব্রুয়ারী ৭ম ধাপে কুমিল্লার দেবীদ্বারে ১৫টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহন অুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ
ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান বলেন,
ইউছুফপুর ইউনিয়নে দু’পক্ষের সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রনে আনি। নিহত সুরুজ মিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হবে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক
জানিয়েছেন নিজতের শরীরে আঘাত বা জখমের চিহ্ন ছিলনা। আমরা ঘটনা অনুসন্ধান
করছি, ময়নাতন্তের পর পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ পর্যন্ত কোন পক্ষই অভিযোগ
পত্র বা মামলা দায়ের করেনি।