গত ৩১ জানুয়ারী সোমবার চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে একটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে ওই ট্রলারে থাকা ১১ জনের মধ্যে পাঁচজন মারা যায়। মারা যাওয়া ট্রলারের মালিক আউয়ালের (৫৪) বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। সে উপজেলার শুশুন্ডা গ্রামের মো. সিরাজ মিয়ার ছেলে। এ খবর পত্রিকায় প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশের। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ছুটে যান মৃত আউয়ালের বাড়িতে। আউয়ালের স্ত্রী মনিমালা বেগমের হাতে তিনি বিশ হাজার টাকা তুলে দেন এবং পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় সবাই আউয়ালের মুখাপেক্ষী ছিলো। দুই বছর আগে বড় মেয়ে শাহিনুরকে বিয়ে দিয়ে ছিলেন। স্বামীর যৌতুকের চাহিদা মেটাতে না পারায় সংসার ভাঙ্গে তার। সংসারে আরো তিন কন্যাসন্তান রয়েছে আউয়ালের। দ্বিতীয় মেয়ে কুহিনুর নবম তৃতীয় মেয়ে মাহমুদা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। ছোট মেয়ে সামসুন নাহারের বয়স ছয় বছর। এক মাত্র ছেলে শাকিল নবম শ্রেণীতে পড়ে।
পরিবারের চাপ আর সন্তানদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হতো দিনমজুর আউয়াল কে। কারণ হঠাৎ এলাকায় কাজ কমে যায়। কিন্তু এতে সে দমে যাননি। স্বপ্ন বুনলেন নতুন কিছু করার। তাই কিছু জমানো টাকা আর বাদবাকি ধার-কর্জ করে চার লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি করলেন একটি ট্রলার। কিছু দিন এই এলাকায় কাজ পেলেও পরে কাজের ভাটা পরে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও সংসারের চাকা সচল রাখতে আউয়াল ট্রলার নিয়ে বেশি কাজের আশায় পাড়ি দেয় চাঁদপুর জেলায়। স্বপ্ন ছিল শত কষ্ট করে হলেও সন্তানদের মানুষ করে পরিবারকে সুখী করবেন।
কিন্তু কঠোর পরিশ্রমী স্বপ্নবাজ আউয়ালের সব স্বপ্ন চিরতরে শেষ হয়ে গেছে। গত সোমবার ৩১ জানুয়ারী সকালে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তাঁদের ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ট্রলারের মালিক আউয়ালসহ পাঁচ শ্রমিক মারা যান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হাড়িয়ে পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। স্ত্রী ও বড় মেয়ের আহাজারিতে এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। গত মঙ্গলবার সকালে শুশুন্ডা গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
আউয়ালের মৃত্যুতে দিশাহারা স্ত্রী মনিমালা বেগম বলেন, ‘ তাইনে সাগরে ডুইবা মরলেও আমগোরে ভাসাইয়া গেলেন সাগরে। এখন সন্তানদের নিয়ে কী করব, কিভাবে বাঁচব, ভেবে কূল পাচ্ছি না।’ আপনাদের সাহায্য আমি ভুলবো না।’
অনুদান দিতে এসে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে মৃত আউয়ালের পরিবারের হাতে বিশ হাজার টাকা দিয়েছি। সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়ে সহযোগীতা করবো।’