সৌরভ মাহমুদ হারুন / শাহীন আলম ||
কুমিল্লার
বুড়িচং ও দেবিদ্বার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন পরিষদে আজ সোমবার শুরু হচ্ছে ইউপি
নির্বাচন। অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সকল
প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে উপজেলা নির্বাচন কমিশন। রোববার সকাল থেকে
প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের হাতে যাবতীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম আনুষ্ঠানিক ভাবে
তুলে দেওয়া হয়েছে।
ইউপি নির্বাচনে প্রচারণ প্রচারণা চলাকালে বুড়িচং
উপজেলায় তেমন বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া না গেলেও দেবিদ্বারে ছিলো উত্তেজনাকর
পরিস্থিতি। এর মধ্যে দেবিদ্বারে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজনের
প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা
একে অন্যের বিরুদ্ধের এনেছেন নানা অভিযোগ। প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ
নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার ১০ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ
সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।
দেবিদ্বার উপজেলার নির্বাচন অফিস
সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ১৪৪টি কেন্দ্রে অবাধ সুষ্ঠু ও
শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি
সম্পন্ন করা হয়েছে। রোববার সকাল থেকে উপজেলার ৫টি রিটার্নিং কর্মকর্তার
কার্যালয় থেকে ১৪৪টি ভোট কেন্দ্রের নির্বাচনী যাবতীয় সরঞ্জাম প্রিজাইডিং
কর্মকর্তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়। নির্বাচন ঘিরে রোববার উপজেলা চত্বর ও পৌর
শহর এলাকায় বিরাজ করছিল অন্যরকম এক উৎসবমুখর পরিবেশ। পাশাপাশি নির্বাচনী
কাজে দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত আনসার, পুলিশ ও মহিলা আনসারদের পদচারণায়
মুখরিত ছিল উপজেলা চত্বর। এদিকে র্যাব, বিজিবি, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের
বিশেষ টিম টহল দিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি জানান দিয়েছেন। চার স্তরবিশিষ্ট
নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি
ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়মিত মোবিং করবে প্রতিটি ইউনিয়নে।
উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলাম আন্দোলন বাংলাদেশ এর
মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ চেয়ারম্যান পদে ১১৬ জন প্রার্থী
প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাচন
কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে সকল
ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যথাসময়ে নির্বাচনী মালামাল বিভিন্ন
কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর
করা হয়েছে।
এদিকে বুড়িচং উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের ১০৩ টি বিভিন্ন
কেন্দ্র ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে ৬৫৯ টি বুথে ২ লক্ষ ৩২
হাজার ৭ শত ৫৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। মোট ভোটারের মধ্যে
পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৪১ জন ও মহিলা ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১
লক্ষ ১৩ হাজার ১৪ জন। এর মধ্যে উপজেলার ৯ টি বিভিন্ন ইউনিয়নে ৬১ জন
চেয়ারম্যান প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা পদে ৮২ জন সাধারণ মেম্বার পদে ৩৫৭ জন
প্রার্থী মিলে মোট ৫০০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটার ছাড়া
অন্য কোন যানবাহন ও ব্যক্তি ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে প্রবেশ সম্পূর্ণ
নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৯ টি ইউনিয়নের মধ্যে সরকারি ঘোষণানুযায়ি শুধুমাত্র
ময়নামতি ইউনিয়নে ইভিএম এ ভোট গ্রহণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও ইভিএম
এর কার্যক্রম সম্বদ্ধে প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে ময়নামতি নামতলা বড় বাড়ি সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কতিপয় দৃর্বৃত্ত কর্তৃক ইভিএম মেশিন ভাংচুর ও নির্বাচন
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার
মোছাম্মৎ সাবিনা ইয়াছমিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ও
বুড়িচং থানার ওসি আলমগীর হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এছাড়া, বুড়িচং ৯ নং ভারেল্লা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী
বীরমুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক মুন্সী ‘অটো রিক্সা’ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী
হয়েছেন। তিনি বিগত বছরে ভোট দিতে না পেরে কাফনের কাপড় পড়ে নির্বাচনী
প্রচারণা শুরু করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, নির্বাচনকে
সুন্দর, অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষভাবে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে
ইতিমধ্যে প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বৈধ
ভোটার ছাড়া কেন্দ্রে কোন বহিরাগত যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিভিন্ন
কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্র্থীদের
আচরণবিধি ও করণীয় ও বর্জনীয় বিভিন্ন বিষয়ে উপজেলার সব কটি ইউনিয়নে
স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচনে যাতে কোনরূপ সহিংসতার সৃষ্টি হতে না পারে সে
লক্ষ্যে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাম্মৎ সাবিনা ইয়াছমিন, উপজেলা
নির্বাচন অফিসার মো.দেলোয়ার হোসেন ও থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর
হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মতবিনিময় সভা ও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
বুড়িচং থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান- আসন্ন
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সকলের নিকট সুষ্ঠু ও সুন্দর করে গ্রহণের জন্য
উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদা সম্পন্ন
দায়িত্বের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আনসারের ব্যাপক সংখ্যাক অফিসার ও ফোর্স
অবস্থান করবে।
এছাড়া, প্রতিটি কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটগণ ও অবস্থান
করবেন।নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করলেই জেল, জরিমানা, ও তাদেরকে আটক করা হবে।
কোন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টির পায়তারা ও নাশকতা
সৃষ্টিকারী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রতি রয়েছে আরো কঠোর হুশিয়ারী বার্তা।
অধিকন্তু, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী ও অনুষ্ঠিতব্য
নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে গ্রহণের জন্য বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ
গ্রহণ করেছে।