ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ইলিশ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান
Published : Tuesday, 8 February, 2022 at 12:00 AM
ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকাকালে ভিজিএফের পাশাপাশি মৎস্যজীবী-জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, মৎস্য আহরণের সময় এবং মৎস্য আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণের যৌক্তিক, গবেষণালব্ধ ও বাস্তবতাসম্পন্ন কারণ রয়েছে। মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকাকালে মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ দেওয়াসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে সরকার। মৎস্যজীবীদের বিকল্প কাজের জন্য রিকশা, ভ্যান, গরু, হাঁস-মুরগির বাচ্চা দেওয়া হচ্ছে। মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময় তারা যেন কর্মহীন না হন- সেজন্যই এই ব্যবস্থা।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বলেশ্বর নদীতে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, শূন্য থেকে দেশে মৎস্য উৎপাদন বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। একসময় শঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে, নতুন প্রজন্মকে বলতে হবে ইলিশ জাতীয় একপ্রকার মাছ ছিল, তার গায়ের রং এমন ছিল, স্বাদ এমন ছিল। একটা সময় একেবারেই ইলিশ হারিয়ে যাচ্ছিল। সেই জায়গা থেকে ইলিশের উৎপাদন এমন জায়গায় আনা হয়েছে যে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সাত লাখ মেট্রিক টন আহরণের পর আরও দেড় লাখ মেট্রিক টন আহরণ করা যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের একটি প্রবণতা আছে, যতক্ষণ নদীতে মাছ আছে ততক্ষণ আমরা সব মাছ তুলে ফেলবো। এ ধারণাটা মৎস্যখাতে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ নদী বা জলাশয়ে থাকতে হবে। নদী থেকে কতটা মাছ তোলা যাবে তার বিজ্ঞানসম্মত অভিজ্ঞতা ও রিপোর্ট রয়েছে। সার্বক্ষণিক আমরা যদি মৎস্য আহরণ করতে দেই, তাহলে একসময় পানি থাকবে কিন্তু কোনো মাছ থাকবে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আরও বলেন, নদী দূষণ, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন, নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, অভয়াশ্রমে অবৈধ মৎস্য আহরণ, অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, নদীতে ডিম ছাড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত করাসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তখন ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষ দেশের পরিচয় আমাদের আর থাকবে না। এজন্য ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও অভয়াশ্রম সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, সমুদ্রে আমাদের বিশাল সম্ভাবনাময় মৎস্যসম্পদসহ অন্যান্য সম্পদ রক্ষার জন্য সামুদ্রিক মৎস্য আইন করা হয়েছে। বড় বড় দুর্বৃত্ত, জলদস্যু ও দেশের বাইরের লোক এসে যাতে অবৈধভাবে আমাদের মৎস্যসম্পদ আহরণ করতে না পারে, সেজন্য এই আইন করা হয়েছে। এ আইন মৎস্যজীবী-জেলেদের সাজা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এমনটি নয়।
এসময় দেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি ও কমিউনিটি সম্পৃক্তকরণের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী।
কর্মশালায় বিএফআরআইর গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বলেশ্বর নদী ও মোহনা অঞ্চলে ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩৪৮ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চলকে প্রজনন ক্ষেত্র ঘোষণার জন্য প্রস্তাব করা হয়।
প্রস্তাবিত অঞ্চলকে প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণার মধ্যমে দেশে ইলিশের ৫ম প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত হবে। এর ফলে সর্বমোট সাত হাজার ৩৪৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ অবাধে প্রজননের সুযোগ পাবে। প্রস্তাবিত প্রজনন ক্ষেত্র এলাকা হচ্ছে- বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার বগী বন্দর থেকে পক্ষীর চর সংলগ্ন পয়েন্ট পর্যন্ত। এছাড়াও পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা থেকে পটুয়াখালী (বরগুনা জেলার সীমানা সংলগ্ন) জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নের লেবুর বাগান পয়েন্ট পর্যন্ত। বিএফআরআইর গবেষকরা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করে এই প্রজনন এলাকা নির্ধারণ করেছেন বলে কর্মশালায় জানানো হয়। নতুন এ প্রজনন ক্ষেত্র জাটকা ও প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ এবং অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। ফলে দেশের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন বয়সের ও আকারের ইলিশ প্রায় সব মৌসুমে পাওয়া যাবে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নিয়ামুল নাসের ও মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, মৎস্য বিজ্ঞানি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, মৎস্যজীবী ও জেলে প্রতিনিধিরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।