দ. আফ্রিকা সফর
বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ দলর সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। আর সেই সূচি প্রকাশ করার পরই একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাকিব কি সেই সফরে টেস্ট খেলবেন? কারণ যখন বাংলাদেশের দুইটি টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে, তখন আইপিএলও চলবে।
আর এ কথা ধ্রুব সত্য আইপিএলের কারণে সাকিব সব সময়ই জাতীয় দলকে অবহেলা করেছেন, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন! খেলতে যাননি দলের সঙ্গে। এবারও একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেলেও শুধু ওয়ান ডে খেলে চলে আসবেন।
বাংলাদেশ দল আগামী মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবে। সেখানে খেলবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। ওয়ানডে সিরিজ বিশ্বকাপের সুপার লিগের অংশ। টেস্ট সিরিজ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের। সূচিতে বাংলাদেশ তিনটি ওয়ানডে খেলবে ১৮, ২০ ও ২৩ মার্চ। প্রথম টেস্টে শুরু হবে ৩১ মার্চ। দ্বিতীয় টেস্ট ৮ এপ্রিল।
এদিকে আইপিএলের মেগা নিলাম অনুষ্ঠিত হবে ব্যাঙ্গালুরুতে ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি। খেলা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ২৭ মার্চ। যে কারণে তার টেস্ট সিরিজ খেলা হবে না। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করার না শর্তে বিসিবির এক কর্মকর্তা হাসতে হাসতে ঢাকাপ্রকাশ-কে মজা করে বলেন, ‘আজকের আকাশ দেখেছেন? কী রকম কুয়াশাচ্ছন্ন। বাকিটা আপনি বুঝে নেন।’
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকে সামনে রেখে নির্বাচকরা ৩০ জনের একটি প্রাথমিক দল বিসিবিতে জমা দিয়েছেন। সেই দলে যথারীতি সাকিবের নাম রাখা হয়েছে।
এদিকে প্রায় সপ্তাহ খানিক আগে সাকিব বিসিবির সঙ্গে কথা বলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজ না খেলার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। বিসিবিও তা মেনে নিয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা সফরে তিনি টেস্ট খেলবেন।
এ বিষয়ে বিসিবির ক্রিকেট অপরেশনস কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সাকিবের কথা হয়েছে। সে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শুধু ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। এরপর শ্রীলঙ্কা সফরে আবার টেস্ট খেলবে। আপাতত তার সঙ্গে আমাদের এই দুই সিরিজ নিয়ে কথা হয়েছে। এরপর উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ আছে। সেই সিরিজ নিয়ে পরে কথা হবে।’
গতবার শ্রীলঙ্কা সফরে সাকিব প্রথমে বিসিবিকে কিছু জানাননি। তখন তার আইপিএলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল। পরে কলকাতা নাইট রাইডার্স তাকে দলে টেনে নেয়। এরপরই সাকিব বিসিবিকে জানিয়ে দেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য তিনি জাতীয় দলে না খেলে আইপিএলে খেলবেন। বিসিবি তার এ রকম আবদার মেনে নিতে বাধ্য হয়। যে কারণে সাকিব শ্রীলঙ্কা সফরে যাননি। অথচ শ্রীলঙ্কা সফরে দুইটি টেস্টই ছিল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ।
পরে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে আইপিএলে স্থগিত হয়ে যায়। সাকিবও ফিরে আসেন। পরে সেই আইপিএল অনুষ্ঠিত হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দুবাইতে। পরে সাকিব আবার আইপিএল খেলেছিলেন। সেখান থেকে অনেক পরে বিশ্বকাপের দলে যোগ দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়েছিল ভরাডুবি। প্রাথমিক রাউন্ডে ভালো খেললেও মূল পর্বে গিয়ে সাকিব ব্যাটে-বলে ছিলেন ব্যর্থ।
বাংলাদেশ টেস্ট খেলবে আর সাকিব খেলবেন না এটা সাম্প্রতিক সময়ে একটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সর্বশেষ যে ১৮ টেস্টে খেলেছে সেখানে সাকিব খেলেছেন মাত্র ৬ টেস্ট। সর্বশেষ তিনি খেলেছেন ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট।
গতবছর শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট খেলবেন না বলে সাকিব লঙ্কা কান্ডই বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। বিসিবির কাছে প্রেরিত চিঠিতে তিনি সরাসরি টেস্ট না খেলার কথা উল্লেখ করেননি। একটু ঘুরিয়ে লিখেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভালো প্রস্তুতির জন্য তিনি আইপিএলে খেলতে চান। তৎকালীন ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান সংবাদ মাধ্যমে সরাসরি সাকিবের টেস্ট না খেলার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
এ নিয়ে আকরাম খানকে উদ্দেশ্য করে সাকিব প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন। উদ্বর্তপূর্ণভাবে তিনি জানিয়েছিলেন আকরাম খান তার চিঠিই পড়েননি। সাকিব তখন জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক বিসিবির পরিচালক নাঈমুর রহমান দূর্জয়েরও সমালোচনা করেছিলেন। পরে এই দুই সাবেক অধিনায়ক বিষয়টি নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের গুলশানের বাসভবনে দেখা করে বিস্তারিত অবগত করেছিলেন। কিন্তু এ নিয়ে বিসিবির পক্ষ থেকে পরবর্তিতে সাকিবের বিরুদ্ধে কোন রকমের পদক্ষেপ নেওয়া খবর জানা যায়নি।
এদিকে নিউ জিল্যান্ড সফরেও সাকিব যাননি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে। যদিও নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্ট জিতেছিল ৮ উইকেটে। এই টেস্ট জয়ে সাকিবের অভাব অনেকখানি মুছে গেছে। তাইতো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবি কর্মরত সাবেক এক খেলোয়াড় বলেন, ‘সাকিবকে ছাড়াই তো নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। তা ছাড়া তাকে ছাড়া খেলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে দল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে না খেললেও দলে কোনো প্রভাব পড়বে না।