ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লার শালবন বিহার প্রত্নসম্পদের সন্ধানে ফের খনন শুরু
Published : Friday, 25 February, 2022 at 12:00 AM, Update: 25.02.2022 12:58:17 AM
কুমিল্লার শালবন বিহার প্রত্নসম্পদের সন্ধানে ফের খনন শুরুতানভীর দিপু:
কুমিল্লায় ৭ম-৮ম শতকের প্রাচীণ নিদর্শন শালবন বৌদ্ধ বিহারে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খনন কাজে উল্লেখযোগ্য হিসেবে সর্বশেষ ২০১৪ সালে সন্ধান মেলে একটি প্রাচীন একটি কূপের। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কিছু খনন কাজ হলেও একটি মেঝে ব্যতীত তেমন কিছু আসেনি প্রকাশ্যে। এরপর প্রায় ৪ বছর শালবন বিহারে হয়নি কোন খনন কাজ, দর্শনার্থীদের সামনে আসে নি- নতুন কোন তথ্য কিংবা প্রত্নসম্পদ। তবে এবছর আবারো শুরু হয়েছে খনন কাজ। মূল বিহারের পাশর্^বর্তী অংশ থেকে আরো নতুন কিছুর সন্ধানে নেমেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। বৌদ্ধ বিহার এবং তৎকালীন মানুষের জীবন যাপন সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকা আরো কোন সরঞ্জাম কিংবা টেরাকোটার সন্ধান করতেই মূল বিহারের আঙ্গিনায় উত্তর-পূর্ব কোনায় খোঁড়াখুড়ি শুরু করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর-কুমিল্লার আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে খনন কাজে অংশ নিয়েছেন ময়নামতি যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাসিবুল হাসান সুমি, ফিল্ড অফিসার শাহীন আলম, সার্ভেয়ার চাই থয় মারমা, ড্রাফটস ম্যান রিপন মিয়াসহ বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে আসা একদল দক্ষ শ্রমিক। গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় এই খনন। চলবে অন্তত এক মাস।
গতকাল বৃহস্পতিবার কোটবাড়ি এলাকায় শালবন বিহারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শালবন বিহারের ভেতরে মূল বিহার মন্দিরের সামনের দিকে উত্তর পূর্ব কোনায় সীমানা করে খুব সতর্কভাবে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ একটি দল। মাটির উপরের অংশ খুঁড়ে পাওয়া ইট পাথর আর মাটি আলাদা আলাদা পরখ করে দেখা হচ্ছে- সেখানে নতুন কোন প্রত্নসম্পদের অংশ বিশেষ পাওয়ার আশায়। এবার খনন কাজ চালানোর জন্য নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে আনা হয়েছে একদল দক্ষ খনন শ্রমিক। এসব শ্রমিকরা বংশ পরম্পরায় যুগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রত্নসম্পদ খোঁজার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।কুমিল্লার শালবন বিহার প্রত্নসম্পদের সন্ধানে ফের খনন শুরুকুমিল্লা শালবন বিহারের পার্শ্ববর্তী ময়নামতি যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাসিবুল ইসলাম সুমি জানান, প্রতিবছরই নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে কুমিল্লার বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্রে খনন কাজ করা হয়। তবে সব সময় একই এলাকায় খনন কাজ চালানো সম্ভব হয় না। তবে এবছর অনেক আশা নিয়ে খনন কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমানে যে জায়গায় খনন চলছে এখানে এর আগে কখনো খনন হয়নি। তাই এখানে নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। তাই সতর্কতার সাথে খনন চলছে।
কুমিল্লার লালমাই থেকে ময়নামতি পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ৫৫ টি প্রত্নক্ষেত্র। এর মধ্যে খনন কাজ হয়েছে ১০টিতে। শালবন বিহার এলাকায় খনন কাজ প্রথম শুরু হয় ১৯৫৫ সালে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে খননে বেরিয়ে আসে বর্তমান শালবন বৌদ্ধ বিহারের স্থাপত্যশৈলীটি।  
কুমিল্লার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান জানালেন, যুগ যুগ ধরে বগুড়ার মহাস্থানগড় ও দেশের নানান জায়গায় প্রত্নসম্পদ খনন করে উন্মোচিত করা শ্রমিকদের দিয়ে এবছর খনন কাজ হচ্ছে শালবন বৌদ্ধ বিহার। নতুন তথ্য ও প্রত্নসম্পদের সম্ভাবনা নিয়েই তাদেরকে দিয়ে করানো হচ্ছে এই খনন কার্যক্রম। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সব সময়ই নতুন নতুন খোঁজ নিয়ে খনন কাজ চালানোর জন্য সচেষ্ট আছে। তবে দক্ষ শ্রমিক এবং লোকবলের অভাবে অনেক সময় খনন কাজ ব্যাহত হয়। তবে আমরা এবছর চেষ্টা করছি দেশের অন্যতম প্রত্নক্ষেত্র কুমিল্লার কোটিবাড়ি শালবন বৌদ্ধ বিহারে খনন কাজ চালিয়ে দেশবাসীকে নতুন কিছু উপহার দিতে।