Published : Thursday, 10 March, 2022 at 12:00 AM, Update: 10.03.2022 12:41:58 AM
তানভীর
দিপু: রেললাইন থেকেই দেখা যায় মীমদের ক্লাস রুম। ট্রেনে কাটা পরে দেহ থেকে
প্রাণ অনেক দূরে চলে গেলেও টুল বেঞ্চ থেকে সামান্য দূরে রেল লাইনেই
পরেছিলো রক্তমাখা ব্যাগ, বই-খাতা ও টিফিন বক্স। পাশেই তিন জোড়া প্লাস্টিকের
স্যান্ডেলেও রক্ত আর ধুলোবালির মাখামাখি। কয়েক পা দূরে থাকলেও আর কোন দিন
সেই ক্লাসে ফেরা হবে না রিমা-তাসফিয়াদের। দেখা হবে না বন্ধুদের সাথে,
শিক্ষকদের সাথে। কিন্তু প্রতিদিনই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্কুলে যায় তাসফিয়া,
মীম ও রিমা। গতকালও বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো ক্লাসের জন্য।
কিন্তু তাদের আর ক্লাসে যাওয়া হয় নি। প্রতিদিন বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে যেতে বাড়ি থেকে হাঁটাপথে যে রেললাইন অতিক্রম করতে হয়, সেই
রেললাইনেই ট্রেনে কাটা পরে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাদের। রেল কর্মকর্তাদের
অনুমতিতে পরে বিজয়পুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্কুলেই নিয়ে যায়
ব্যাগ-বই খাতাগুলো। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ সাদেকুর রহমান জানান, তাদের
সবাই আমার খুব পরিচিত। স্কুলের পাশেই তাদের বাড়ি। মীম, রিমা, তাসফিয়ার
মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমাদের স্কুলের সকল শিক্ষক
শিক্ষার্থীরাই শোকাহত। বৃহস্পতিবারও স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।
পঞ্চম
শ্রেণীর খ শাখার শ্রেণী শিক্ষক রোকেয়া আকাক্তার শোকার্ত কণ্ঠে জানান, এমন
দুঃখজনক ঘটনা, কিছু বলার নাই। রীমা আর তাসফিয়া আমার ক্লাসেই ছিলো। তারা তিন
জনই একই এলাকার পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় বন্ধুর মতই ছিলো তারা।
বিজয়পুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিজয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় একই আঙিনায়।
স্কুলের মাঠের লাগোয়া এই রেল লাইন। মাঠ থেকে হরহামেশাই ছাত্র-ছাত্রীরা
রেললাইন পার হয়ে চলে যায় ওপাশের বাড়িঘরে। তবে গতকাল সাড়ে ১১ টায় দুর্ঘটনার
সময় দুই লাইনে দু’টি ট্রেন মুখোমুখি অতিক্রম করছিলো। মহানগর এক্সপ্রেস
ট্রেনে কাটা পরে শিক্ষার্থীরা। বিপরীত পাশেই বিজয় এক্সপ্রেস ছিলো
সিলেটমুখী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দূর্গাপুর গ্রাম থেকে এসে বিজয়পুর
বাজারের গলিপথ হয়ে মীম, তাসফিয়া ও রিমা রেললাইন পার হবার চেষ্টা করছিলো।
রেলপথের উপর উঠেই তারা দেখতে পায় সামনের লাইনে কুমিল্লামুখী সিলেটগামী বিজয়
এক্সপ্রেস। যেকারনে তারা পিছিয়ে আবার প্রথম লাইন অতিক্রম করে রেলপথ থেকে
নেমে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু বিধিবাম। অপর লাইনে নেইস্থানে চলে আগে
দ্রুতগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস। মীম ও রিমাকে ধাক্কা দিয়ে লাইনের পাশে
ফেলে চলে গেলেও ট্রেনের সামনে আটকে অনেকদূর চলে যায় তাসফিয়ার দেহ। পরে
স্থানীয়রা তাদের নিথর নিষ্প্রাণ দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নিহত মীম,
রিমা ও তাসফিয়া সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজারের পাশর্^বর্তী দূর্গাপুর
গ্রামের বাসিন্দা। দুর্ঘটনার পর নিহতদের পরিবারের সাথে দেখা করেন কুমিল্লা
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানর ও পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিবারকে অর্থসহায়তার পাশাপাশি ভবিষ্যতেও
পরিবারগুলোর পাশে থাকার আশ^াস দেন তারা।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা
ম্যাজিষ্ট্রের শিউলি রহমান তিন্নি জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও
আইসিটি) নাজমা আশরাফীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন
করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের ব্যবস্থা
নিবেন।