Published : Thursday, 10 March, 2022 at 12:00 AM, Update: 10.03.2022 12:42:05 AM
তানভীর দিপু:
কুমিল্লায়
স্কুলে যাওয়ার পথে ট্টেনে কাটা পড়ে ৩ শিশু শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। বুধবার
(৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল পথের কুমিল্লা সদর
দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছে সদর দক্ষিণ
উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মো. মাসুমের মেয়ে মিম (১৪),
একই গ্রামের রিপন মিয়ার মেয়ে রিমা (১২) ও বরুড়া উপজেলার অর্জুনতলা গ্রামের
ভুলু মিয়া মেয়ে তাসফিয়া (১৩)। তারা তিনজন বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। এর মধ্যে তাসফিয়া দুর্গাপুর গ্রামে
নানার বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতো। এ ঘটনায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে
তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এই তিন শিশু
শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকাতুর
বাবা-মায়ের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে ওই এলাকার পরিবেশ। বার বার মোর্ছ
যাচ্ছেন নিহত শিশু পিতা-মাতাসহ স্বজনরা।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, ওই
তিন ছাত্রী প্রতিদিনই কাধে কাধ মিলিয়ে একসাথে স্কুলে আসা-যাওয়া করতো।
বরাবরের মতো বুধবারও সকালেও একসাথে স্কুলে যাচ্ছিল তারা। বেলা সাড়ে ১১টার
দিকে বিজয়পুর এলাকায় রেললাইন পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি ট্রেনে কাটা পড়ে
তিন বান্ধবী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন
খন্দকার জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনে
কাটা পড়লে ঘটনাস্থালেই ওই ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ
ঘটনাস্থলে এসে তিন ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে। পরে তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে
হস্তান্তর করা হয়।
বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
সাদেকুর রহমান জানান, নিহত তিন ছাত্রীই তাঁর বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে
পড়াশোনা করতো। স্কুলে আসার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়
তাদের।
এদিকে দুর্ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ও
কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে
পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে লাইনে ট্রেন ও
কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাছল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে
ট্রেনে কাটা পড়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত
কমিটি গঠন করা হয়েছে। কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)
নাজমা আশরাফিকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপর
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও
জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, তিন শিক্ষার্থীর
মৃত্যুর বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের
প্রত্যেক পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা হিসেবে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া
হয়েছে। ভবিষ্যতেও প্রশাসন এ তিন পরিবারের পাশে থাকবে।
পুলিশ সুপার বলেন,
এই ঘটনায় সকল আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রেললাইন এবং মহাসড়ক
স্কুলগামী ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষকরা যেনো নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে স্কুল
কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলাপ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ
দুর্ঘটনায় আমরা মর্মাহত।