কখনো যদি বাংলাদেশে বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়, তা যথাযথভাবে প্রতিরোধ করতে সশস্ত্র বাহিনীকে সব সময় প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে শরিয়তপুরের জাজিরায় ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’-এর উদ্বোধনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে, দেশ আরও উন্নত হবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে যে কোনো হুমকি- আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, যুদ্ধ আমরা করবো না, জাতির পিতা আমাদের যে পররাষ্ট্র নীতি শিখিয়ে গেছেন ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়' আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি। ’
কিন্তু আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। কখনো যদি বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয় আমরা যেন তা যথাযথভাবে প্রতিরোধ করতে পারি এবং আমরা যেন আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি। ’
শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়তে সরকারের নেওয়া কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীকে আমাদের আরও উন্নত-প্রশিক্ষিত, সমৃদ্ধশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি মনে করি আমাদের সশ্রস্ত্র বাহিনীর প্রজ্ঞা, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্য-নিষ্ঠা দিয়ে আমাদের দেশের সুনাম বৃদ্ধি করবে। ’
‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ এর আলোকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই ব্রিগেড শেখ রাসেল সেনানিবাসের মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তে স্থানান্তরিত হয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা বিধানে সফলভাবে আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই সেনানিবাসের ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড ও অধীনস্থ ইউনিটগুলো নিরলসভাবে পরিশ্রম করে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আজ শেখ রাসেল সেনানিবাস একটি পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস হিসেবে পরিণত হয়েছে, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সব ধরনের প্রশিক্ষণ এবং প্রশাসনিক সুবিধা তৈরি করা হয়েছে।
‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ এর গুরুত্ব তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘এই টুকু বলবো শুধু এই নির্মাণ নয়, এই সেতুর বিধানও একান্ত ভাবে প্রয়োজন। আর সেই নিরাপত্তা বিধানের জন্যই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু দ্রুত শুরু হয়ে যাবে যান চলাচল, কাজেই সেতুর নিরাপত্তা একান্ত ভাবে অপরিহার্য। ’
নতুন সেনানিবাসটির নাম ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দুই ভাইই তো আসলে সেনাবাহিনীর সদস্য ছিল (ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল)। ... সবার ছোট রাসেল তাকে আমরা হারিয়েছি। রাসেলের আকাঙ্ক্ষা ছিল সামরিক অফিসার হবে, হতে পারেনি। আমি সেনাবাহিনী প্রধান ও সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই আজকে এই সেনানিবাসের নাম শেখ রাসেল সেনানিবাস রাখা হয়েছে। অত্যন্ত তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হলেও রাসেলের নামটা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকলো। ’
নতুন এ সেনানিবাসের কারণে এ অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান এবং সেনানিবাসের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষেরও সার্বিক উন্নয়ন হবে। কারণ আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যেখানেই থাকুক, যেখানেই তাদের সেনানিবাস আছে সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকাগুলোতেও কিন্তু অনেক উন্নতি হয়। সেখানে স্কুল-কলেজ, চিকিৎসা কেন্দ্র বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ওঠে। আশাপাশের মানুষগুলোর আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। তারাও লাভবান হয়। ’
দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সে পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি এবং তার কাজও প্রায় সম্পন্ন। জাতির কাছে কৃতজ্ঞ তাদের সাহসী ভূমিকা ও সমর্থন পেয়েছি বলেই এটা করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বন্ধু প্রতিম দেশও আমাদের সমর্থন দিয়েছে। ’
‘এ সেতু নির্মাণের ফলে আমি মনে করি আমাদের জিডিপিতে অন্তত আরও ১ ভাগ থেকে ২ ভাগ প্রবৃদ্ধি সংযুক্ত হবে। অর্থাৎ উন্নয়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবো সেটা আমি বিশ্বাস করি। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলো যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থারই শুধু উন্নতি হবে না, আর্থ-সামাজিক উন্নতিও হবে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা বা তাদের যোগাযোগ একটি সেতুর নির্মাণের মধ্যে দিয়ে একটা এলাকা উন্নত হয়। আজকে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। আমরা প্রতিটি গৃহহারা মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। ’
এ সময় শেখ রাসেল সেনানিবাস প্রান্তে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।