Published : Saturday, 9 April, 2022 at 12:00 AM, Update: 09.04.2022 12:50:16 AM
হাফেজ মাওলানা মো. মিজানুর রহমান ||
হযরত
সালমান (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (স.) মাহে রমজান সম্পর্কে এরশাদ ফরমান, যে
মাহে রমজান হল ছবরের মাস, সহানুভূতির মাস। রমজান ছবরের মাস অর্থাৎ রোজা
রাখার কারণে যদি কষ্ট হয় তবে এই কষ্ট খুশি মনে সহ্য করা। ধর-মার, হাঁক, ডাক
যেন না হয়। কারণ এর দ্বারা রোজার উদ্দেশ্য নষ্ট হয়। রব্বে কারীমের
সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে যদি কিছু কষ্ট করতে হয় তা ধৈর্যের সাথে সহ্য করে
নিতে পারলে আখেরাতের জীবনে এর প্রতিদান হবে অনেক বিশাল। কারণ ধৈর্যের বিষয়
পবিত্র কোরআনে রয়েছে যে আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। হাদিসে রয়েছে
ধৈর্যের প্রতিদান হল জান্নাত। এর চাইতে বড় চাওয়া পাওয়া মানুষের দুনিয়া ও
আখেরাতের জীবনে আর কিছুই হতে পারে না। তাই মাহে রমজানে সামান্য কষ্ট হলেও
আমরা তা খুশি মনে গ্রহণ করে নিব।
এই মাসকে হাদিসে সহানুভূতির মাসও বলা
হয়েছে অর্থাৎ গরিব-মিসকীনদের প্রতি দয়া ও সদ্ব্য ব্যবহারের মাস। নিজের
ইফতারির জন্য যদি দশ রকম আইটেম থাকে তাহলে পাশের একজন গরিবের জন্য কিছুনা
কিছু হলেও থাকা উচিত। প্রকৃত নিয়ম হল আমার থেকে আমার একজন ভাইকে প্রাধান্য
দেওয়া। হযরত সাহাবায়ে কেরাম যারা উম্মতের জন্য আমলি নমুনা ছিলেন তাদের
জীবনে এর অসংখ্য ঘটনা দেখা যায়, নিজের উপর অপর একজন ভাইকে কিভাবে প্রাধান্য
দিতে হয়। একটিমাত্র ঘটনা এখানে উল্লেখ্য হযরত আবু যাহমা (রাঃ) বলেন,
ইয়ারমুকের যুদ্ধে আমার চাচাত ভাই এর সন্ধানে এক মশক পানি নিয়ে বাহির হইলাম।
যদি তাহাকে পাই আর তার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস বাকি থাকে তাহলে তাকে পানি পান
করাব এবং হাত-মুখ ধুয়ে দিব। তালাশ করতে করতে হঠাৎ দেখতে পেলাম আমার চাচাত
ভাই পড়ে আছেন। আমি তাহাকে ইশারায় পানির কথা জিজ্ঞাসা করিলাম তিনি পানি
চাহিলেন, এমন সময় সামনের দিক হতে আরেকজন আহত ব্যক্তি আহ্ করিয়া উঠিলেন, তখন
আমার চাচাত ভাই নিজে পানি না পান করে সেই ব্যক্তির দিকে ইশারা করিলেন,
তাহার নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, জানতে পারি তিনি পিপাসিত এবং পানি চাহিলেন।
এমন সময় তাহার থেকে সামান্য দূরের অপর আহত আরেক ভাই পানি চাহিলেন তখন
দ্বিতীয় ব্যক্তি পানি পান না করে তৃতীয় ব্যক্তির নিকট যাইতে ইশারা করিলেন।
আমি শেষ ব্যক্তির নিকট গিয়ে দেখি তিনি শাহাদাৎ বরণ করিয়াছেন। ফিরে দ্বিতীয়
ব্যক্তির নিকট এসে দেখি তিনিও শাহাদাৎ বরণ করিয়াছেন। আমার চাচাত ভাই এর
নিকট এসে দেখি তিনিও দুনিয়াতে আর নাই। শাহাদাত বরণ করিয়াছেন। এই হল আমরা
যাদের উত্তরসুরী তাদের সহানুভূতির দৃষ্টান্ত। তাই রমজানুল মোবারকে আল্লাহ
আমাদেরকে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার তাওফীক দান করুন।