Published : Sunday, 17 April, 2022 at 12:00 AM, Update: 17.04.2022 1:10:28 AM
হাফেজ মাওলানা মো. মিজানুর রহমান ||
যে
অন্যকে ক্ষমা করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করবেন। মাহে রমজানের
মাগফিরাতের দশক, আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা পাওয়ার জন্যে তাওবা এস্তেগফারের
সাথে সাথে আরো কিছু আমল করতে হবে। যার একটা হল অন্যকে ক্ষমা করা। হাদিস
শরীফে রয়েছে- যে অন্যকে ক্ষমা করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করবেন।
অন্যদের সাথে আমাদের মোয়ামেলা বা আচরণ যেমন হবে, আমাদের সাথে ও আল্লাহ
তা’আলা ওই রকম মোয়ামেলা বা আচরণ করবেন। আমরা যদি মানুষের দোষত্রুটি গোপন
রাখি আল্লাহ তা’আলাও আমাদের দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। হাদিস শরীফে এসেছে- যে
ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষত্রুটি গোপন করে আল্লাহপাকও দুনিয়া এবং আখেরাতে
তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। এভাবে মানুষকে ক্ষমা করলে আল্লাহপাকও আমাদেরকে
ক্ষমা করবেন। ক্ষমা ইসলামের একটি মহৎগুণ। রাসুল (স.) এবং ছাহাবায়ে কেরামদের
জীবনে বেশুমার উদাহরণ রয়েছে। হযরত আলী (রা:) খেলাফত কালে তার প্রধান
সেনাপতি মালেক ইবনে আস্তার (রহ.) গায়ে ছালার চট জড়িয়ে কুফার রাস্তা দিয়ে
হাটতেছিলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি কোন কারণ ছাড়া তার গায়ে একটি পাথর নিক্ষেপ
করল। সেনাপতি তার দিকে তাকিয়ে সামনে চললেন। একজন দর্শনার্থী ঐ পাথর
নিক্ষেপকারিকে বললেন তুমি কার গায়ে পাথর মারলে জান? লোকটি বলল না আমি
জানিনা। যার শরীরে তুমি পাথর মারলে তিনি এই খেলাফতের প্রধান সেনাপতি। পাথর
নিক্ষেপকারী লোকটি ভিত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে সেনাপতির পেছনে পেছনে হাঁটতে
লাগলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর সেনাপতি রাস্তার পাশে একটি মসজিদে ঢুকলেন এবং
দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। পাথর নিক্ষেপকারী ব্যক্তি বাহিরে দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে কাঁদছে। সেনাপতি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁদছ কেন? উত্তরে লোকটি বলল,
আমি অপরাধ করেছি। আমাকে ক্ষমা করুন। সেনাপতি বললেন, তোমার ক্ষমার জন্যই
মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছি। পাথর নিক্ষেপকারী ব্যক্তি
তার দিকে অবাক দৃষ্টে তাকিয়ে আছেন। যে সেনাপতি মালেক ইবনে আস্তার কি বলছেন?
সেনাপতি তাকে বললেন, শুন এই রাস্তাটি সরকার নির্মাণ করেছে রাষ্ট্রের সকল
মানুষের জন্যে। আমি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসাবে তাতে হাটার অধিকার আমার
আছে। তুমি যখন আমাকে পাথর মারলে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, তুমি
আমাকে চিনতে পার নাই। তাই চিনে বা না বুঝে ভুল করার কারণে আমি তোমাকে মাফ
করে দিলাম। কিন্তু আমিতো আমার এক মালিকের গোলাম, আমার মালিকের নাম হল
আল্লাহ। তুমি যখন আল্লাহ তা’আলার এক গোলামের উপর অন্যায়ভাবে পাথর দিয়ে আঘাত
করলে তখন আমার মালিক আল্লাহ তা’আলা তোমার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। আমি মসজিদে
গিয়ে দুরাকাত নামাজ পড়ি। আমার মালিকের নিকট তোমার জন্য দোয়া করে তোমার
ক্ষমা মঞ্জুর করে তারপর মসজিদ থেকে বের হলাম। তোমার প্রতি আমার উপদেশ হল-
আর কখনো কারো উপর অন্যায় ভাবে আঘাত করবে না। অতএব মাহে রমজান ক্ষমার মাস,
আমরা যদি অন্যকে ক্ষমা করি তাহলে আল্লাহতালাও আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।