চট্টগ্রামে
শাহরিয়ার নাজিম জয় নামে এক কিশোরের মৃত্যুর পর বন্দরনগরে কিশোর গ্যাংয়ের
দৌরাত্ম্যের খবরটি নতুন করে গণমাধ্যমে আসে। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে,
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নগরে কিশোর
গ্যাংয়ের তালিকায় ২৫২ কিশোরের নাম আছে। এই কিশোরদের ‘বড় ভাই’ হিসেবে ছায়া
দিচ্ছেন অন্তত ৪৮ জন রাজনৈতিক নেতা-সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রায় সবাই নানাভাবে
ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যা,
ছিনতাই, ফুটপাতে হকার বসানো এবং আধিপত্য বিস্তারসহ প্রায় সব ধরনের অভিযোগের
সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত।
২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত দুই
ডজন খুনের সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত বলে তথ্য রয়েছে। ঢাকা ও
ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে উঠতি বয়সী কিছু কিশোর। দলবদ্ধ এই
অপরাধীচক্র ‘কিশোর গ্যাং’ নামে পরিচিত। উদ্ভট নাম নিয়ে গড়ে ওঠা এসব দলের
অনেক সদস্যই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হয়নি। পাড়া-মহল্লায় তারা আতঙ্কের কারণ
হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের ক্রাইম অ্যানালিসিস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে
কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।
কিশোরদের এভাবে অপরাধপ্রবণ হয়ে
ওঠার কারণ কী? সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় যে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম
কারণ, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে নানা অসংগতি
রয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিশোররা। তাদের আচরণে
পরিবর্তন হচ্ছে। কিশোর বয়সে হিরোইজম ভাব থাকে। আবার কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে
ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে উঠছে। কিশোর
বয়সে ইতিবাচক চর্চার দিকে না গিয়ে নেতিবাচক চর্চার দিকে চলে যায়। আবার যখন
তারা দেখে যে অপরাধ যারা করছে, তারা সমাজে বেশি লাভবান হচ্ছে, সেটা কিশোররা
অনুসরণ করে। তাদের ওপর পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
সমাজবিজ্ঞানীরা
বলছেন, পারিপার্শ্বিক নানা কারণে অনেক আগে থেকেই অপরাধী তালিকায় নাম এসেছে
অল্প বয়সীদের। তাঁরা মনে করেন, দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি
পারিবারিক শিক্ষার অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। সন্তানের শিক্ষা ও চরিত্র
গঠনের প্রতি অভিভাবকদের যতটা মনোযোগ দেওয়া দরকার, তা প্রায়ই দেওয়া হয় না।
আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজের সামান্য
লাভের জন্য কিশোরদের অপরাধজগতে টেনে নেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের
ব্যবহার করেন।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? কেন সমাজে কিশোর অপরাধ বাড়ছে? কেন কিশোরদের অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে?
সমাজবাস্তবতার
দিকে তাকালে দেখা যাবে, এখন এলাকাভিত্তিক সামাজিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই
চলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না, খেলার মাঠ কমে এসেছে। সামাজিকভাবে
বিনোদনমূলক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ কম থাকায় কিশোররা ক্রমেই অপরাধজগতে
ঢুকছে। সমাজ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবার ও সামাজিক পর্যায়ে সঠিক পরিচর্যা ও
পর্যবেক্ষণ কিশোর অপরাধ কমাতে অনেক সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা
রক্ষা বাহিনীকেও কঠোর হতে হবে।