গত
বৃহস্পতিবার নারী অভিবাসীদের সহায়তায় ২২টি বেসরকারি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত
জোট ‘সম্মিলিত কণ্ঠ’ আয়োজিত সেমিনারে অভিবাসী নারীদের যে চিত্র উঠে এসেছে,
তা খুবই বেদনাদায়ক। এতে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, অভিবাসন প্রক্রিয়া
থেকে শুরু করে গন্তব্যদেশটিতে প্রবাসী নারী কর্মীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি
নির্যাতনের শিকার হন। কেবল নিয়োগকর্তা নন, সহকর্মী পুরুষ কর্মীরাও তাঁদের
নির্যাতন ও হয়রানি করে থাকেন। তাঁদের মজুরি ও সুযোগ-সুবিধাও পুরুষের চেয়ে
কম।
সেমিনারে অভিবাসী নারী কর্মীদের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, বাস্তবতা
তার চেয়েও ভয়াবহ। ১৮ এপ্রিল প্রথম আলোয় সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা গৃহকর্মী
সোমা আক্তারের করুণ কাহিনি ছাপা হয়েছে। সেখানে ওই নারীর ওপর এই মাত্রায়
নির্যাতন করা হতো যে তিনি মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলেছেন। প্রবাসী নারী
শ্রমিকদের নানা করুণ কাহিনি প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ
থেকে সৌদি আরবেই বেশি নারী কর্মী যান এবং সেখানে তাঁরা যৌন হয়রানিসহ নানা
রকম নির্যাতনের শিকার হন। অনেকে বন্দিজীবন কাটাতে বাধ্য হন।
সেমিনারে
বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক
কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদও উপস্থিত ছিলেন। তিনি নারী অভিবাসীদের
সমস্যার কথা স্বীকার করে এর সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে
একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন। মন্ত্রী অভিবাসী নারী কর্মীদের সমস্যাটি
যতটা লঘু করে দেখেছেন, বিষয়টি ততটা লঘু নয়।
নারী কর্মীদের নিয়োগ থেকে
শুরু করে সেখানে কাজ পাওয়া—এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রায় প্রতিটি স্তরে
প্রতারণার ফাঁদ পাতা থাকে, যার সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অসাধু
কর্মকর্তারাও জড়িত। একশ্রেণির জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে
লোভনীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার নামে নারীদের পাচার করে থাকে। এদের আইনের আওতায়
আনতে না পারলে অভিবাসী নারী কর্মীদের দুঃখের দিন শেষ হবে না। অনেক দেশ
নির্যাতন ও হয়রানির কারণে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে নারী কর্মী
পাঠানো বন্ধ রেখেছে, সেখানে আমরা অতি উৎসাহে তাঁদের পাঠাচ্ছি। সরকারের এই
নীতিকে সমর্থন করা যেত, যদি নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতন না করা হতো। এসব
দেশে আইনি প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।
মন্ত্রী মহোদয়
জার্মানি, জাপানসহ বেশ কিছু দেশে নারী কর্মীদের চাহিদা থাকার কথা বলেছেন।
এটি অবশ্যই সুখবর। কেননা, এসব দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো
এবং সরকারের জবাবদিহি আছে। জার্মানি ও জাপানের মতো উন্নত দেশ নারী কর্মীদের
জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে, যদি সরকার অভিবাসনের প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে
পারে।
তবে নারী কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে তাঁদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে
গড়ে তোলা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা যেমন সম্মানজনক পদে অধিক বেতনে কাজ
করার সুযোগ পাবেন; তেমনি প্রতারিত কিংবা নির্যাতিত হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকবে।
আমরা
বিদেশে নারী কর্মী পাঠানোর বিরোধী নই। তবে সরকারকে নিশ্চয়তা দিতে হবে,
সেখানে গিয়ে কেউ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হবেন না। একই সঙ্গে অভিবাসনের
প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই নারী
কর্মীরা কেবল নিজের পরিবারকেই সাহায্য করেন না, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল
রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।