ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
রেদোয়ানের ছোঁড়া গুলিতে বিদ্ধ ২ জন
‘গুলির প্রমাণ মিলেছে’: গ্রেফতার ৪
Published : Tuesday, 10 May, 2022 at 12:00 AM, Update: 10.05.2022 12:48:58 AM
রেদোয়ানের ছোঁড়া গুলিতে বিদ্ধ ২ জনরণবীর ঘোষ কিংকর:
কুমিল্লার চান্দিনায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের ছোঁড়া গুলিতে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় রেদোয়ান আহমেদসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (৯ মে) দুপুরে উপজেলা সদরের রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে এলডিপি ও ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের পাল্টাপাল্টি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্রে করে ওই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপর রেদোয়ান আহমেদ থানায় আশ্রয় নিলে উত্তেজিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীরা চান্দিনা থানার প্রধান ফটক ঘেরাও করে।
গুলিতে আহত দুইজন হলেন- চান্দিনা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা রূপনগর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে মাহমুদুল হাসান জনি সরকার (২২)। পৌর ছাত্রলীগ নেতা জনি ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে এমবিএ সম্পন্ন করেন। অপরজন হলেন চান্দিয়ারা গ্রামের নূরুল ইসলাম এর ছেলে নাজমূল হোসেন নাঈম (২৮)। সে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী।  
পুলিশ জানিয়েছে, ড. রেদোয়ান আহমেদ যে গাড়ি থেকে গুলি ছোঁড়েছেন- প্রাথমিকভাবে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলার পর ৪ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরে আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে।রেদোয়ানের ছোঁড়া গুলিতে বিদ্ধ ২ জনপ্রত্যক্ষদর্শী সূত্র বলছে, চান্দিনা পৌরসভা রোডের রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবন এর সামনে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিল। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনে আসার পর কলেজ গেইটে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতারা রেদোয়ান আহমেদ এর গাড়ি থামিয়ে কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই গাড়িতে তরমুজ দিয়ে ঢিল মারে। এসময় রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি থেকে পরপর দুইটি গুলি ছুঁড়েন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সামিরুল খন্দকার রবি জানান, ‘চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ছাত্রলীগ ঈদের পূর্ব থেকে আজ (৯ মে) ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করতে প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে পৌর এলডিপিও একই দিন একই স্থানে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। সোমবার দুপুর থেকে ছাত্রলীগের আয়োজনে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা যখন মমতাজ আহমেদ ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে ঠিক দুপুর আড়াইটায় দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি নিয়ে ওই ক্যাম্পাসের সামনে এসে গাড়ি থেকে ২টি গুলি করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। রেদোয়ান আহমেদ এর গুলিতে জনি ও নাজমুল গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল জানান, ‘ছাত্রলীগ কলেজ ক্যাম্পাসে এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ পাশ্ববর্তী পৌর আধুনিক  অডিটরিয়ামে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। আমাদের নেতা-কর্মীরা যখন প্রোগ্রাম স্থলে আসতে শুরু করেছে তখন রেদোয়ান আহমেদ রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর অমানবিক ভাবে অতর্কিত গুলি চালায়’।  
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের দুইজনকে আমাদের হাসপাতালে আনার পর আমরা তাদের এক্স-রে করে ভিতরে বুলেট দেখার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ জানান, আমাদের পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম ছিল। আমাকে প্রধান অতিথি করে চিঠির মাধ্যমে পৌর এলডিপি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরই মধ্যে আমাদের প্রধান ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে প্রোগ্রাম করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। আমরা ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবনে পুর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম করার কথা। দুপুরে আমি ক্যাম্পাস-২ এর সামনে গেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের লোকজন আমার গাড়িতে হামলা করে। আমি আত্মরক্ষার্থে আমার লাইসেন্স করা সর্টগানের গুলি চালাই। কার গায়ে গুলি লেগেছে আমি বলতে পারবো না। পরে আমি থানায় এসে আশ্রয় নেই।
সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল) মো. ফয়েজ ইকবাল জানান, পাবলিক রোষানলে রেদোয়ান আহমেদ থানায় আশ্রয় নিতে আসলে আমরা বিস্তারিত জেনে তাকে আটক করি। মামলা দায়ে করার পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
 
মামলা, গ্রেফতার ৪:
এদিকে ড. রেদোয়ান আহমেদের ছোঁড়া গুলিতে দুইজন আহতের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।  সোমবার বিকেলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল বাদী হয়ে ১৫জনের নাম উল্লেখসহ ২০-২৫জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে ড. রেদোয়ান আহমেদসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিকেলে তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে কুমিল্লা বিজ্ঞ আদালতে পাঠায় পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) মহাসচিব সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ (৬৯), মহিচাইল গ্রামের রবিউল্লাহ’র ছেলে আলী  (৩৭), হারং গ্রামের আব্দুল মবিন এর ছেলে বাকি বিল্লাহ (৩৯) ও রেদোয়ান আহমেদ এর গাড়ি চালক সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মেছড়া খামারখাতা গ্রামের আব্দুল হাই শেখ এর ছেলে রেজাউল করিম (৫৫)।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম. তানভীর আহমেদ জানান, ‘পাল্টাপাল্টি সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি থেকে গুলি ছুড়েন। প্রাথমিক ভাবে রেদোয়ান আহমেদ গুলি ছোড়ার সত্যতার প্রমাণ মিলেছে। কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামরা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় ৪জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
রাত সাড়ে ৮টায় কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৭ এর বিচারক আবু বকর তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।