বিপুল জয় নিয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ওরফে বংবং। বেসরকারি ফলাফল বলছে, প্রায় ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
৩৬ বছর আগে ১৯৮৬ সালে এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন ফিলিপাইনের তৎকালীন স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোস। এর তিন দশকেরও বেশি সময় পর তারই ছেলে ৬৪ বছরের বংবংকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে দেশটির মানুষ।
তার বাবা একজন নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার মা আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নাম কুড়িয়েছিলেন জুতার বিশাল সংগ্রহের জন্য। দুর্নীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দুনিয়াজুড়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল পরিবারটি। গণঅভ্যুত্থানের সময় বিপ্লবী কর্মীরা যখন ম্যানিলায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে পড়ে, তখন সেখানে মার্কোস পরিবারের বহু চমৎকার তৈলচিত্র, সোনায় মোড়ানো জাকুজি, ১৫টি মিংক কোট, ৫০৮টি ডিজাইনার গাউন, এবং ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের তিন হাজার জোড়া জুতার সংগ্রহ দেখতে পান।
মার্কোস পরিবার কীভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বেআইনিভাবে সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে, কীভাবে নিউ ইয়র্কের অভিজাত এলাকা ম্যানহাটানে কয়েকটি বাড়ি কিনেছে, তার দলিলও পাওয়া গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়। কিছু মামলায় পরিবারের সদস্যদের দণ্ড হয়, অন্য কিছু মামলায় তারা খালাস পান। এমন একটি পরিবার ফের দেশটির ক্ষমতায় ফিরবে, এক সময় এটা ছিল অকল্পনীয় বিষয়। কিন্তু সেটাকেই সম্ভব করেছেন বংবং।
নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে এক কোটি ৬০ লাখ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে নিশ্চিত জয়ের পথে রয়েছেন বংবং।
এখন পর্যন্ত মোট ৬১ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে বংবং-এর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা তিন কোটি ৬ লাখ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট লেনি রোব্রেদো পেয়েছেন এক কোটি ৪৬ লাখ ভোট।
মার্কোস পরিবারের রাজকীয় প্রাসাদ
ফিলিপাইনের ইলোকোস নর্তে অঞ্চল মার্কোস পরিবারের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। সেখানে স্প্যানিশ কায়দায় তৈরি একটি রাজকীয় প্রাসাদকে বর্ণনা করা হয় উত্তরের মালাচিয়াং প্রাসাদ বলে। মূল মালাচিয়াং প্রাসাদ আসলে হাজার মাইল দূরে রাজধানী ম্যানিলায়, এটি ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন। ফার্দিনান্দ মার্কোস যখন দেশ শাসন করছেন, তখন ১৯৬০-এর দশকে ইলোকোস নর্তের এই প্রাসাদটি তার পরিবারকে উপহার দেয় দেশটির পর্যটন কর্তৃপক্ষ।
মার্কোস পরিবারের তীর্থ বলে পরিচিত এই প্রাসাদোপম বাড়ি এখন জনগণের জন্য উন্মুক্ত। তাদের সমর্থকরা এখানে ফার্দিনান্দ এবং ইমেলদা মার্কোসের রাজকীয় ছবির সামনে সেলফি তোলে, তাদের থাকার ঘরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে। বংবং শৈশবে যে ঘরটিতে থাকতেন, সেখানে একটি কারুকার্য খচিত খাটের বিপরীতে ঝোলানো তার একটি ছবি, ফিলিপাইনের নতুন নেতার এক অসাধারণ প্রতিকৃতি। ছবিতে বংবং একটি স্বর্ণের মুকুট পরে আছেন। একটি সাদা স্ট্যালিয়ন ঘোড়ায় চড়ে মেঘের রাজ্যে চলেছেন। এক হাতে ফিলিপিনের পতাকা, অন্য হাতে বাইবেল।