স্টাফ রিপোর্টার।।
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের ৩য় মেয়াদের নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দাখিলের সময়
প্রদত্ত হলফনামায় বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কৃত সাবেক মেয়র মনিরুল হক
সাক্কু বলেছেন, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনে দায়ের করা একটি
মামলা ও আয়কর আইনে দায়ের করা একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। জানা গেছে,
দুর্নীতি দমন কমিশনে চার কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৩ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও এক কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন
করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন সাক্কু। সে সময়
পলাতক থাকায় তার পক্ষে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন তার স্ত্রী আফরোজা
জেসমিন টিকলি। এরপর দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক শাহিন আরা মমতাজ ঢাকার
রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি
চার্জশিট হয়। পরবর্তীতে ঢাকার ৮ নম্বর বিশেষ জজ সেলিমা বেগম সাবেক মেয়র
মনিরুল হক সাক্কুকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন। ওই আদেশে দুর্নীতি দমন
কমিশন ক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে অব্যাহতির আদেশ কেন অবৈধ হবে না মর্মে আবেদন
করেন, পরে ওই আদেশ বেআইনি কেন ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে
হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ মামলায় মেয়র সাক্কুর জামিন বাতিল করে বিচারিক
আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ প্রদান করেন। সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত তাকে
১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন প্রদান করে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো সাবেক
মেয়র মনিরুল হক সাক্কু আসলে কত সম্পদের মালিক ? দুদকে দায়ের করা সম্পদ
বিবরণীতে তিনি যে তথ্য জমা দিয়েছেন তা সত্য না মিথ্যা ?
গত ১৭ মে
কুমিল্লার রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে দাখিল করা মনোনয়নপত্রের সাথে দেওয়া
হলফনামায় মনিরুল হক সাক্কু সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। যা প্রথমবার মেয়র
পদে দাখিল করা বিবরণীর অনেকগুণ বেশি। তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলির
সম্পদ দৌড়ে বেড়েছে ।
২০১২ সালের নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় সাক্কুর
নগদ অর্থ উল্লেখ করা হয় ১ কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭৫ টাকা। এবার তার নগদ
অর্থ মাত্র ২৬ লাখ টাকা বেড়েছে। এবার তার নগদ অর্থ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার
৮৯২ টাকা।
২০১২ সালের নির্বাচনের সময় তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলির নগদ অর্থ ছিল মাত্র ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৮ টাকা।
এবার তার স্ত্রী টিকলির নগদ অর্থ ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ টাকা।
২০১৭
সালের নির্বাচনের সময় সাবেক মেয়র সাক্কুর সঞ্চয়পত্র ছিল মাত্র ২ লাখ
টাকার। এবার তার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৫০ লাখ টাকার। এবার তার স্ত্রীর
সঞ্চয়পত্র বাবদ রয়েছে ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৪ টাকা, এর আগের বার ছিল ২৯ লাখ ৮৬
হাজার টাকা।
মনিরুল হক সাক্কু তার হলফনামায় বলেছেন, তার মূল পেশা
ব্যবসা (ঠিকাদারী)। তাতে উল্লেখ করেছেন দুই মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব
পালন করায় ব্যবসার যাবতীয় কার্যক্রম তখন থেকেই স্থগিত আছে। অন্যদিকে
সাক্কুর ঠিকাদারী কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও এবারের হলফনামায় তার স্ত্রীর
ব্যবসা থেকে আয় ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং ভাড়া থেকে আয় ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৬
টাকা উল্লেখ করা হয়। সেই সাথে মনিরুল হক সাক্কুর ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় ৪
লাখ ৮ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়। ভাড়া ছাড়া মনিরুল হক সাক্কুর সবচেয়ে বেশি
আয় মেয়র হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী থেকে। বছরে তিনি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা এখাত
থেকে আয় করেন।
সাক্কুর স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলির নতুন করে
বৃদ্ধি পাওয়া সম্পদের মধ্যে গাইবান্ধার পলাশ বাড়ির মনোহরপুরের এক দশমিক
তেইশ একর জমি রয়েছে। এছাড়া ঢাকার ধানমন্ডির সবচেয়ে অভিজাত অরচার্ড পয়েন্টে
তিনটি দোকান, ঢাকার অভিজাত বসুন্ধরা সিটিতে ৩ কাঠা জমির প্লট, রেইসকোর্সে
রেডরোফ ইন হোটেল ৭২৫৬ বর্গফুট, ফ্ল্যাট ৫ এ ও ৫ বি, ৩য় তলায় নিশা টাওয়ারে
রেস্ট হাউস, বজ্রপুরে ডেভেলপার কর্তৃক নির্মাণাধীন একটি ভবনে ১৭টি ফ্ল্যাট,
ঢাকার গুলশান মডেল টাউনে ৩ হাজার ৮শ ২৭ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। এ ছাড়াও ৩৩৭৩
বর্গফুট, ৩৩১৭ বর্গফুট, ৩৩৯০ বর্গফুটের ফ্লোর রয়েছে।
মনিরুল হক
সাক্কুর স্থাবর সম্পদের মধ্যে ঢাকার অভিজাত মধুমতি মডেল টাউনে ৫ কাঠার
প্লট, ঢাকার অভিজাত স্বদেশ প্রপার্টিজে ৫ কাঠার প্লট, ঢাকার অভিজাত
সানভ্যালী আবাসনে ৫ কাঠার প্লট, ঢাকার অভিজাত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৩
কাঠার প্লট, কুমিল্লার বজ্রপুরে ১৭ শতক জমির উপর নির্মাণাধীন ভবনে ১৭ ভাগের
২ ভাগ অংশ, কুমিল্লা শহরের ফাতেমা জাহানারা টাওয়ারে ১৬৫০ বর্গফুটের ২টি
ফ্ল্যাট, ১৯৫০ বর্গফুট, ২৫৮ বর্গফুট, ১৯০ বর্গফুটের ৩টি দোকান, সাত্তার খান
কমপ্লেক্সে ১টি দোকান এবং মনোহরগঞ্জের শরীফপুরে ২০ একর জমির ১৭ ভাগের
২ভাগ, লালমাই মৌজায় ১০৪ শতক নাল ও ১৪৬ শতক পুকুর রয়েছে।
মনিরুল হক সাক্কু ও তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলির মাত্র ১০ তোলা করে স্বর্ণ রয়েছে। যার মূল্য ৫০ হাজার টাকা করে।
মনিরুল
হক সাক্কুর ল্যান্ডক্রুজার জীপ আর তার স্ত্রীর একটি জীপ রয়েছে। মনিরুল হক
সাক্কুর ইলেকট্রনিক সামগ্রি রয়েছে মাত্র ৪৭ হাজার টাকার।
মনিরুল হক সাক্কু সঞ্চয় আমানত থেকে বছরে ৩ লাখ টাকা আয় করলেও তার স্ত্রী আয় এখাতে নেই।