কুমিল্লার
কাগজ রিপোর্ট।। কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন
কমিশন। দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক যুগান্তর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং
প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর
লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় নির্বাচনি এলাকা ত্যাগ
করে আচরণ বিধি প্রতিপালন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে বলা হয়।
নির্বাচন কমিশনের উপ সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) মো: আতিয়ার রহমান
স্বাক্ষরিত এ নির্দেশ সম্বলিত চিঠি এমপি বাহারকে দেওয়া হয়।
এ দিকে
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পূর্বের চিঠির (১৬ মে) প্রেক্ষিতে করা এক রীট
আবেদনের শুনানী শেষে হাইকোর্ট কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন
নিয়ে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের প্রচারণা না চালানোর নির্দেশনা কেন
অবৈধ ও বে-আইনি এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি
করেছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত আবেদনের বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার
(৮ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও কাজি জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত
বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ১৬ মের চিঠির প্রেক্ষিতে এমপি বাহারের পক্ষে আদালতে রীট
আবেদন করেন সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি
বলেন, নতুন করে এলাকা ত্যাগের কথা উল্লেখ করে সংসদ সদস্য হাজী বাহারকে যে
চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন তার ব্যাপারে নতুন করে রীট করতে হবে। নতুন
নির্দেশনা চাইতে হবে।
৮ জুন এমপি বাহারকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের উপ
সচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে আদিষ্ট হয়ে
আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আগামী ১৫ জুন ২০২২ তারিখ কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং
শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল
কর্মকর্তা আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন
আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর ২২ বিধি অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে
অংশগ্রহণ করতে পারেন না। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রিন্ট
মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে যে, অতি গুরুতপূূর্ণ ব্যক্তি কৌশলে
নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন। গত ০৭ জুন ২০২২ তারিখের দৈনিক
যুগান্তর এবং দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় যে, ২৫৪
কুমিল্লা-৬ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আ. ক. ম বাহাউদ্দিন অত্যন্ত কৌশলে
নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহন করছেন, যা সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ)
বিধিমালা, ২০১৬ এর ২২ বিধির লংঘন। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লিখিত
অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে তদন্ত করালে লিখিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া
যায়, যা মোটেই কাম্য নয়। এ প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ)
বিধিমালা, ২০১৬ এর ২২ বিধিতে রয়েছে ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নির্বাচনি প্রচারণা এবং সরকারি
সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ। (১) সরকারি সুবিধাভোগী অতি
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন-পূর্ব
নির্বাচনি প্রচারণায় বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না;
তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার হইলে
তিনি কেবল তাঁহার ভোটপ্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাইতে পারিবেন। (২)
নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোন
ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনি কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র,
সরকারিযান বাহন, অন্য কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধাভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা
কর্মচারীগণকে ব্যবহার করিতে পারিবেন না।"
চিঠিতে এমপি বাহারকে উদ্দেশ্য
করে বলা হয়- উল্লিখিত অবস্থার প্রেক্ষিতে, যেহেতু আপনি বিধি বহির্ভূতভাবে
কৌশলে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন, তাই আপনাকে ২৫৪ কুমিল্লা-৬
নির্বাচনি এলাকা ত্যাগের নির্দেশনা দেয়ার জন্য মাননীয় নির্বাচন কমিশন
সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এমতাবস্থায়, অনতিবিলম্বে আপনাকে উল্লিখিত
নির্বাচনি এলাকা ত্যাগ করে আচরণ বিধি প্রতিপালন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে
সহযোগিতা করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
অপর দিকে আচরণবিধি লংঘনের
কারনে গত ১৬ মে নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে
পরবর্তীকালে নির্বাচনপূর্ব সময়ে আচরণবিধি ভঙ্গের যেন কোনও ঘটনা না ঘটে, বা
আচরণবিধি ভঙ্গের উপক্রম না হয়, অথবা আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত হয়, তার
জন্য আচরণ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট বিধি অবহিত করে জাতীয় সংসদের ২৫৪ কুমিল্লা-৬
আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে চিঠি প্রদান করে নির্বাচন
কমিশন। সে চিঠির প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে রীট করেন তিনি। রীটের আইনজীবী সাঈদ
আহেমেদ রাজা বলেন, যেহেতু সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন সরকারি কোনো
কর্মকর্তা নন। তিনি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। তিনি দল করতে পারেন। তাহলে
কেন তিনি তার দলের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। সংবিধান
তাকে যে কারো পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে অধিকার দিয়েছে।
তিনি জানান, আদালত কেন ঐ চিঠি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে কারন দর্শাতে বলেছে নির্বাচন কমিশনকে।