এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
ভোজ্য তেলের সংকট নিরসনে তিল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। দেবীদ্বারের কিছু সংখ্যক কৃষক স্বল্পপরিসরে তিল চাষকে ভাগ্য পরিবর্তনে লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছেন। তাদের আবাদী ফসলের সবুজ মাঠগুলোতে সবুজ তিল ক্ষেতের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের অনাবিল হাঁসিঁ পথিকেরও মন কাড়ছে। চাষিদের ঘরে তোলা তিল থেকে তৈরী তেল দিয়ে ঘরের রাঁধুনী তার সুস্বাধু তরকারী, পিঠা-পুলিসহ নানা খাবার রান্নার বাহারী আয়োজন করে আসছেন।
কম শ্রম ও কম খরচে সবধরনের মাটিতে উৎপাদন হওয়ায় তিল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে যাবে তিল চাষীদের ভাগ্য। চাষীরা তিল চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে তিল চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন আবাদের পর ক্ষেত যখন খালি থাকে তখন তিল চাষ করা যায়। এতে ধানের কোনো ক্ষতি হয় না। তিল চাষে সার ও কীটনাশক লাগে না বললেই চলে। গরু ছাগলে তিল খায় না। তাই রক্ষণাবেক্ষণে কোনো খরচ হয় না। শীত- বর্ষাসহ সকল ঋতুতেই তিল চাষ করা যায়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জাসান জানান, ভোজ্য তেল সোয়াবিনের বিকল্প হিসেবে তিল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আমরা কৃষকদের মধ্যে প্রনোদনাসহ উৎসাহ বাড়াচ্ছি। চলতি মৌসুমে ১০ হেক্টর জমিতে তিল চাষের লক্ষমাত্রা নিয়েছি। এর মধ্যে উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের আসানপুর ব্লকের কৃষক মোঃ সফিকুল ইসলাম ও জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের বেগমাবাদ ব্লকের চরবাকর গ্রামের কৃষক মোঃ মোসলেম উদ্দিনের মাধ্যমে এক একর করে দু’টি ‘কৃষি প্রদর্শনী করা হয়। কৃষি বিভাগ থেকে প্রতি একর তিল চাষের জন্য বারি ৩-৪ জাতের ৩ কেজি বীজ, ৮০ কেজি ইউরিয়া, ৭৪ টিএসপি, ৪৫ কেজি এমওডি ৯ কেজি জিংক, ৬৪ কেজি জিপসাম সার, কীটনাশক, অটোষ্টিন, ডাসবান ও একটি প্রদর্শনী খামারের সাইন বোর্ড দেয়া হয়েছে। জমি, শ্রম ও ফসলের মালিক ওই দুই কৃষকই হবেন।
খরচ কম আর আর্থিকভাবে লাভবান হতে তিল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটির জৈব ঘাটতি পূরণেও লাভজনক হওয়ায় এর চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাজার ব্যবস্থাপনা সুবিধা পেলে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা হতে পারে তিল। মাঝে এ শস্য চাষ অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে ফের বাড়ছে।
উপজেলার আশানপুর গ্রামের তিল চাষী সফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, তিন বছর ধরে তিল চাষ করছেন তিনি। তার দেখা দেখি ওই গ্রামের অনেকে তা চাষ করছেন। এটি চাষে জমির উর্বরা শক্তি বাড়ে। রাসায়নিক সার ও জমি নিড়ানির দরকার হয় না। সামান্য শ্রম ও অল্প খরচে প্রতি বিঘায় পাঁচ থেকে ছয় মণ ফলন মেলে।
তিনি বলেন, আলুর জমিতে তেমন চাষের প্রয়োজন হয় না। জমি সমান করে তিলের বীজ ছিটালেই চলে। প্রতি বিঘায় প্রয়োজন ২/৩ কেজি বীজ। সেচ, সার, নিড়ানি ছাড়াই তিন মাসের মধ্যে তিল ওঠে। এর কোনো রোগবালাই না হওয়ায় কীটনাশকের দরকার হয় না। তিল চাষ বৃদ্ধি পেলে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
তিলের তেল চুল পড়া কমিয়ে দিয়ে কেশ বৃদ্ধি করে, টাক পড়া থেকে রক্ষা করে, ত্বকের পক্ষেও উপকারী। হজমে ও সাহায্য করে তিলের তেল। উপকারিতার জন্য চীনের মতো প্রাচীন ভারতেও তিলের তেলের কদর ছিল। তিলের গুনাগুন নিয়ে বলতে যেয়ে তিনি আরো বলেন, এ তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে মাথা ঠান্ডা থাকে। তিলের রয়েছে বহু ব্যবহার। এর খাজা খুব সুস্বাদু। খৈল জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। তাছাড়া তিলের তেল দিয়ে সবধরনের তরকারি রান্না করা যায়।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রৌফ বলেন, ভোজ্যতেল সোয়াবিনের ঘাটতি পুরনে বিকল্প হিসেবে তিল, সরিষা এবং সূর্য্যমূখী চাষে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি বেশী। সোয়াবিনের চেয়ে তিল, সরিষা, সুর্যমূখী তৈলের পুষ্টিগুনও বেশী। এনব আবাদে কৃষক তার নিজ চাহিদা পুরনের পরও বাজারজাত করতে পারেন। তার জন্য কৃষি অধিদপ্তর কৃষি পদর্শনী, উদ্ভুদ্ধ করন সভায কৃষকদের সচেতন ও আগ্রহ বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।