
আজ
১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে যে ভোট হতে যাচ্ছে, তা একটি স্থানীয় সরকার
সংস্থার নির্বাচন হলেও নানা কারণে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্ব পেয়েছে। প্রথমত,
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি বড় স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন
হতে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রতি সারা দেশের মানুষের নজর থাকবে।
দ্বিতীয়ত, বিগত নির্বাচন কমিশনের আমলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা একেবারে
ভেঙে পড়ে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সেই ভেঙে পড়া ব্যবস্থাটি পুনরুদ্ধারে
কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি না, সেটাও এক বড় বিবেচনার বিষয়।
কুমিল্লা
সিটি করপোরেশন নির্বাচন এমন সময়ে হতে যাচ্ছে, যখন নির্বাচন নিয়ে জাতীয়
পর্যায়ে অস্থির ও অস্বাভাবিক পরিবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। স্বাভাবিক পরিবেশ হলো
সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট
দিতে পারেন। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সাম্প্রতিক কালের অন্যান্য
স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনের মতো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনও
বর্জন করেছে। সেই বিবেচনায় এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে কি না, সেই
প্রশ্ন থেকেই যায়।
এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২ লাখ ২৯
হাজার ৯২০ জন ভোটার পছন্দসই প্রার্থী বেছে নেবেন। মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী
থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক ও
স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হকের মধ্যে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে
নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় মনিরুল বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তবে এই
নির্বাচনে স্থানীয় সমস্যার চেয়েও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে দলীয় রাজনীতি।
স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনে দলীয় রাজনীতি প্রাধান্য পেলে এলাকার মানুষ
বঞ্চিত হয়। এ কারণেই আমরা বরাবর স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে করার বিরোধী।
আশার
কথা, এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ
মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল। নিয়ম অনুযায়ী গতকাল মধ্যরাতের পর থেকে
নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি মানানোর
বিষয়ে দৃশ্যত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে
সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আশঙ্কার বিষয় হলো বহিরাগতদের
আনাগোনা। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ করা হয়েছে।
কুমিল্লা সিটি
করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বেশির ভাগই
পালিত হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পাশাপাশি তিনজন
মেয়র প্রার্থীকেও জরিমানা করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও একটি বিষয়ে
তাদের ব্যর্থতা কেবল পীড়াদায়ক নয়, এই কারণে ভোটের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ারও
শঙ্কা আছে। নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোর অভিযোগের
পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এলাকা
ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তিনি তা মানেননি। নির্বাচনী এলাকায়ই থেকেছেন। এ বিষয়ে
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ
করেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সুশাসনের জন্য নাগরিক
(সুজন) বলেছে, সিইসির এ অসহায়ত্ব ভালো লক্ষণ নয়।
আমরাও মনে করি,
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন যখন কোনো নির্দেশ দেয়, সেটি সবাই
মানতে বাধ্য। এখানে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব প্রকাশের সুযোগ নেই।
প্রয়োজনে তারা প্রশাসন তথা সরকারের সহায়তা চাইতে পারে।
আমরা আশা করব,
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে যা যা
প্রয়োজন, কমিশন সবই করবে। কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
কুমিল্লাবাসী তাদের পছন্দসই প্রতিনিধি বেছে নিতে পারলে তা ভবিষ্যতে জাতীয়
স্তরের নির্বাচনী রাজনীতিতে কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সুষ্ঠু
নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনেরই।