ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
‘পদ্মা সেতু চালু হলে বেঁচে যাই, ফেরিঘাটে বসে থাকতে ভালো লাগে না’
Published : Wednesday, 15 June, 2022 at 12:00 AM
পদ্মা সেতু চালু হলে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছানোর আশায় আছেন বেনাপোল স্থলবন্দরের ট্রাক চালকরা। এতে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব পদ্মা সেতু হয়ে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার। কিন্তু পদ্মা পারের বিড়ম্বনায় এক রাত তো লাগেই, প্রায়ই দুইদিনের বেশি লেগে যায় চালকদের।
বেনাপোলের ট্রাক চালকরা জানান, মাঝে মধ্যে চারদিনেও পৌঁছানো যায় না। ঢাকা শহরে দিনে ট্রাক চলা নিষিদ্ধ। অনেক সময় ভোরের দিকে পদ্মা পার হতে পারলেও সারাদিন বসে থাকতে হয় রাতের অপেক্ষায়।
বেনাপোলের ট্রাকচালক জসিম উদ্দিন  (৩২) বলেন, ‘সেতু চালু হলে বেঁচে যাই। ১৫ মিনিটে নদী পার হতে পারবো। ঘাটে ৪-৫ দিন ধরে বসে থাকতে হবে না। ফেরিঘাটে বসে থাকতে ভালো লাগে না।’
জসিম বেনাপোল থেকে পণ্যভর্তি ট্রাক নিয়ে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার বা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পথে পদ্মা পার হন।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার পথে প্রায়ই ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি পার হতে হয়। কিন্তু সেখানেও ফেরি পার হতে প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
ট্রাকচালক জসিম বলেন, ‘কখনও নাব্য সংকট, কখনও বেশি স্রোত, কখনও ঘাটে যানজট। সারাবছর একটা না একটা বিপদ লেগেই থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলে বেনাপোল বন্দর থেকে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জের কারখানায় পণ্যের চালান পাঁচ ঘণ্টায় পৌঁছে দেওয়া যাবে। এতে পরিবহন শ্রমিক, মালিক, কারখানা মালিক বা আমদানিকারক সবারই লাভ।’
রপ্তানি ও আমদানির কাঁচামাল পরিবহন করেন বেনাপোলের ট্রাকচালক শিপন হোসেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাকে কাঁচামাল তুললে পৌঁছে দিতে দিনের পর দিন লেগে যায়। ফেরি পারের রাস্তায় এ জাতীয় মালামাল বহনে খুব রিস্ক। তাই যমুনা সেতু হয়ে যেতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বাড়ে। আমাদেরও খুব কষ্ট হয়। পদ্মা সেতু চালুর পর কাঁচামাল নিয়ে গিয়ে আবার রপ্তানির মাল নিয়ে দিনে দিনে বেনাপোল ফিরতে পারবো।’
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে আগামী ২৫ জুন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সেতু চালুর অপেক্ষায় রয়েছেন এসব জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দরে কাজের গতি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার।
তিনি বলেন, ‘পদ্মাপারের ঝক্কিতে সময়মতো পণ্য পৌঁছানো যায় না। ভাড়া বাবদ খরচও বেড়ে যায়। সেতু চালু হলে অনেক ব্যবসায়ী নৌপথে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের বদলে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করতে পারবেন।’
বিশাল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক সাইদুল ইসলাম বলেন, বেনাপোল বন্দর থেকে অনেক জরুরি পণ্য ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে পাঠাতে হয়। তবে যানজট ও ফেরি সংকটে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের দুর্ভোগ কমবে।
বেনাপোল চেকপোস্টের মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলেন, আমরা শতভাগ বিশ্বাস করি বেনাপোল বন্দর দিয়ে আগের চেয়ে পর্যটক যাতায়াত ও আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আসা-যাওয়া বাড়বে। তাই মানিচেঞ্জার ব্যবসারও প্রসার ঘটবে।
যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, যশোর অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকায় যাবে। সে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। তাছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের গুরুত্ব আরও বাড়বে।