ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
আবারও ওমিক্রন, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
Published : Monday, 20 June, 2022 at 12:00 AM, Update: 20.06.2022 1:43:37 AM
আবারও ওমিক্রন, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। দায়ী করা হচ্ছে ওমিক্রনকেই। কোনও দেশে ওমিক্রনের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্টেরও কথাও বলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে সংক্রমণ বাড়ার পেছনে কোন ভ্যারিয়েন্ট সক্রিয় তা এখনও জানা যায়নি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছে। তবে সংক্রমণের ধরন, তীব্রতা ও হার ওমিক্রনের দিকেই ইঙ্গিত করে।
চীনের সাংহাই, উত্তর কোরিয়া ও ভারতে যে ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে, সেই ওমিক্রনের একটি উপ-ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, টানা পাঁচ সপ্তাহ করোনাভাইরাসে মৃত্যু কমার পর গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা চার শতাংশ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) মহামারি সম্পর্কে প্রকাশিত সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, গত সপ্তাহে ৮ হাজার ৭০০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২১ শতাংশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ১৭ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বলেছে, গত সপ্তাহে প্রায় ৩২ লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
দেশে ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। এরপর জানুয়ারিতে বাড়তে থাকে শনাক্তের হার।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংক্রমণের হার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর পর থেকেই সংক্রমণের হার কমেছে। তবে, এসময়ও কিছু অঞ্চলে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। যেমন মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংক্রমণ ৫৮ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস চলতি সপ্তাহের শুরুতে বলেন, ‘যেহেতু অনেক দেশ নজরদারি ও পরীক্ষা কমিয়েছে, তাই শনাক্তের সংখ্যাও কম জানা যাচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারিতে করোনা আক্রান্তের হার ছিল একদিনে সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ। সেদিন শনাক্ত হয়েছিল ১৫ হাজার ৪৪০ জন। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটেও একদিনে এতো রোগী পাওয়া যায়নি।
এরপর শনাক্তের হার কমতে শুরু করে ফেব্রুয়ারিতে। ধারাবাহিকতা ছিল জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শনাক্তের হার।
৬ জুন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে থাকলেও ৭ জুন থেকে ১ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ১২ জুন আবারও আড়াই মাস পর শতাধিক শনাক্ত হয় একদিনে। ৭ জুন থেকে এখন পর্যন্ত ৯ দিনে শনাক্ত হয় ৮৮৩ জন। এরমধ্যে ১৫ জুন একদিনে দুই শতাধিক শনাক্ত হয়। এরপর শনাক্ত আরও বেড়ে শনাক্তের হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
করোনার সংক্রমণ উচ্চ মাত্রায় পৌঁছানোর পরপরই আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, শনাক্তের প্রায় ৮০ শতাংশই ওমিক্রন। তার আগে অবশ্য ওমিক্রন নয়, ডেল্টায় সংক্রমণ বাড়ছে বলে দাবি করেছিল আইইডিসিআর।
এরও আগে আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছিল ওমিক্রনের অন্তত তিন উপধরন ঢাকায় আছে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে আইইডিসিআর জানায়, গত জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০ শতাংশের শরীরে ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশের শরীরে পাওয়া গেছে ডেল্টা। এর মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্টের দুই ধরন বিএ১ এবং বিএ২’র বিস্তার বেশি।
বৈশ্বিক ডাটাবেজ জিআইএসএইআইডি’র তথ্য বলছে, ১ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ১১ হাজার ৮৬৫টি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে। আর সারা বিশ্বে পাওয়া গেছে ৩২ হাজার ৮৪৭টি।
এছাড়া ভারতে ৪৫২টি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০টি, স্কটল্যান্ডে ১ হাজার ২৬৩টি। আর গোটা ইউরোপে পাওয়া গেছে ১৬ হাজার ৫৩টি। এশিয়ায় ওমিক্রনের তথ্য বলছে ৩ হাজার ৪৬৬টি নমুনার তথ্য ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনার সাম্প্রতিক ধরন ও নমুনা নিয়ে কাজ চলছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা তাহমিনা শিরীন। তিনি বলেন, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। শিগগিরই জানানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, অতীতের মতো এবারও তরুণরা আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। গত ১৬ জুন শনাক্ত হওয়া ৩৫৭ জনের মধ্যে ১১২ জন ছিলেন ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। ১৭ জুন এই বয়সীরা শনাক্ত হন ৫৬ জন এবং ১৮ জুন শনাক্ত হন ১১৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘রিপোর্টগুলো প্রকাশ্যে আসছে না। পরোক্ষভাবে কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে উচিত হবে এপিডোমিওলজিক্যাল অ্যানালাইসিস করা। অর্থাৎ রোগতাত্ত্বিক একটা বিশ্লেষণ করা। কারা আক্রান্ত হচ্ছেন, কোন এলাকার বাসিন্দা, তাদের টিকা নেওয়া আছে কি নেই, নেওয়া থাকলে এক ডোজ নাকি পূর্ণ ডোজ, কোন টিকা নিয়েছেন, ভ্যারিয়েন্ট কী, এটা স্থানীয়ভাবে বাড়ছে নাকি ভারত থেকে আসছে—এ ধরনের বিশ্লেষণ যদি করতো তাহলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কী নিলে ভালো হবে তা বোঝা যেত।’
তিনি আরও বলেন, এখনও তো গঁৎবাধা কিছু কথা বলা হয়, মাস্ক পরার জন্য বলা হয়। কিন্তু এগুলো দিয়ে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ হবে না। সংক্রমণ রোধ করার জন্য প্রথমেই দরকার অ্যানালাইসিস।