সিলেটে
কোথাও বন্যার পানি এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে আবার কোথাও সমপরিমান পানি
কমেছে। এই বাড়া-কমার মধ্যে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সিলেটে বন্যা
পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। সিলেটের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে আরও
তিন-পাঁচদিন ভারি বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে সে দেশের সরকারি আবহাওয়া অফিস।
এখনো সিলেট বিভাগীয় শহরের সঙ্গে বন্ধ কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা এবং
সুনামগঞ্জ জেলার সড়ক যোগাযোগ।
রোববার (১৯ জুন) সিলেট মহানগর, জৈন্তাপুর,
বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর উপজেলায় বন্যার পানি কমেছে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত।
তবে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় পানি বাড়ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয় ও উপজেলাগুলোর স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এতথ্য জানা গেছে।
রোববার
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেট মহানগরের ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, লামাপাড়া,
নগরের শামীমাবাদ, কানিশাইল, মজুমদারপাড়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট, সুরমা আবাসিক এলাকা, আখালিয়া, শাহজালাল উপশহর, ওসমানী
মেডিকেল রোড, সোবহানিঘাট, শাপলাবাগ ও এয়ারপোর্ট থানার চালিয়া, উপরপাড়া,
গোয়াবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার পানি কমেছে এক থেকে দেড় ফুট
পর্যন্ত। তবে পানি কমলেও এখনো বাসাবাড়িতে প্রচুর পানি রয়েছে।
নগরের
ঘাসিটুলা এলাকার বাসিন্দা ইশতিয়াক আহমদ বলেন, ‘আজ বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি এক
থেকে দেড় ফুট কমেছে। তবে বাসাবাড়িতে এখনো এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত পানি
আছে। বাবা-মা-বোনসহ আমাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য এখনো ঘাসিটুলা ইউসেপ
টেকনিক্যাল স্কুলে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। কেন্দ্রের মানুষ খাবার সংকটে
আছে। অনেকেই অভুক্ত।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের
কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম ঝলক বলেন, লালাদিঘির পাড় এলাকায় আমার বাসাসহ,
ভাতালিয়া, কুয়ারপাড়, বিলপার ও ইঙ্গুলাল রোডে পানি থইথই করছে। আজ প্রায় এক
ফুট পানি কমেছে। তবে আমার বাসায় এখনো হাঁটুসমান পানি।’
সিলেট সদর
উপজেলার ১ নম্বর জালাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুল্লাহ ইসহাক বলেন,
আমার ইউনিয়নে প্রায় এক ফুট পানি কমেছে। বন্যায় এ ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ইউনিয়নের ৯৫ ভাগ এলাকা পানির নিচে।
বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান
জানান তিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত
উদ্যোগে প্রতিদিন রান্না করা ও শুকনা খাবার সাধ্য অনুযায়ী মানুষের মধ্যে
বিতরণ করছি। তবে এগুলো যথেষ্ট নয়।’
বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা ও বাঁচাও
বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ফজল খান বলেন, ‘তিনদিন পর আজ আমাদের
বিশ্বনাথে একটু রোদ উঠেছে। বন্যার পানিও কমেছে প্রায় দেড় ফুট। পানি কমায়
লোকজন স্বস্তি প্রকাশ করছে। তবে এখনো বন্যার পানির নিচে প্রিয় বিশ্বনাথ
শহর।’
তবে সিলেটের জকিগঞ্জে বন্যার পানি বেড়েছে বলে জানা গেছে। জকিগঞ্জ
উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ বলেন,
কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে পানি আজও বেড়েছে। এ কারণে বেশ কয়েকটি ডাইক
ভেঙে পানি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকছে। ক্রমেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
হচ্ছে। এ অবস্থায় বন্যাদুর্গত লোকজনের মধ্যে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর আহ্বান
জানান তিনি।
জকিগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক এনামুল হক মুন্না জানান,
জকিগঞ্জের বীরশ্রী ইউনিয়নের পীরনগর গ্রামে কুশিয়ারা নদীর তীররক্ষা বাঁধে
ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় রারাই গ্রামে কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধে ভেঙে
তলিয়ে গেছে রারাই, ফলাহাট, পাঠাবচক, ইলাবাজ, ভরণ, শীতলজুরা, হাইলইসলামপুর,
আনারসিসহ অনেক গ্রাম।
কানাইঘাট প্রেস ক্লাবের সহ-সাধারণ সম্পাদক
মাহবুবুর রশীদ জানান, কানাইঘাটে সুরমা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ফের
বন্যার পানি বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর পানি
আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এতে কানাইঘাট উপজেলার সাতবাঁক, দীঘিরপার,
লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম, বড়চতুল, কানাইঘাট পৌরসভা,
রাজাগঞ্জ ও ঝিংগাবাড়ী ইউপিতে পানি বাড়ছে। সকাল থেকে সুরমা উপচে কানাইঘাট
বাজারে হু হু করে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে
দিয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, আজ
সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খুব কম পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুর ২টা
থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম
ছিল। তবে সন্ধ্যায় কিছু সময়ে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আগামীকাল থেকে
আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে আসবে। বৃষ্টিপাতও কমে হবে।
জকিগঞ্জের অমলসীদ
পয়েন্ট সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড
সিলেট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ।
তিনি বলেন, ‘কানাইঘাট
পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি সকাল থেকে বাড়ছিল। তবে বিকেল ৩টার পর থেকে আবার
কমতে শুরু করছে। সিলেট সদর পয়েন্টে যিনি আছেন তার মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ
থাকায় তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে পানি বাড়া-কমার মাপ
আমরা পাচ্ছি না। যেহেতু শহরে ও সদর উপজেলায় পানি কমছে তাই বলা যায় সুরমার
এই পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে।’
বাংলাদেশ বন্যা সর্তকীকরণ কেন্দ্র ও
ভারতের আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে আসিফ আহমদ বলেন, ‘আগামী তিনদিন সিলেটসহ
দেশে বৃষ্টিপাত হবে। এছাড়া আসাম ও মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস
দিয়েছে সে দেশের আবহাওয়া অফিস। তারা বলছেন, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে
পারে সিলেটে। এই মুহূর্তে বন্যা নিয়ে আমাদের হাতে কোনো সুখবর নেই আপাতত।’