উদ্বোধনের
অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে দেবে না, বরং এই
সেতু অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন দেশের শীর্ষ
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘জাতীয়
অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব’ শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন
তারা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটি এই অনুষ্ঠানের
আয়োজন করে।
বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে
অর্থায়ন বাতিল করে দেয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত ৯ দশমিক ৩০
কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিশ্বের এগারতম বৃহত্তম এই সেতু আগামী শনিবার উদ্বোধন
করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো
প্রকল্প, যাতে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। পদ্মা সেতু চালুকে
ঘিরে দেশে উৎসবের আমেজ বইছে। ব্যাপক প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ
থেকে।
শনিবার খুলে দেয়ার পরের দিন থেকেই যানবাহন চলবে পদ্মা সেতু দিয়ে।
জাতীয়
অর্থনীতিতে পদ্মার সেতুর অবদান তুলতে ধরতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী
লীগ। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবদি, বিশেষজ্ঞসহ
শীর্ষ ব্যবসায়ীরা বক্তব্য রাখেন।
বক্তরা বলেন, এটি শুধু একটি সেতু নয়। এটি জাতির গর্ব। আস্থা, সততা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
পদ্মা
সেতু রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকেই যুক্ত করবে না,
বরং সারা দেশকে সংযুক্ত করবে। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের অফুরন্ত
সম্ভাবনা তৈরি হবে। জিডিপিতে যোগ হবে বাড়তি আড়াই শতাংশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ফলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রীর
বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘এটি
আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। বাড়িয়ে দিয়েছে প্রত্যাশা।’
পদ্মা প্রকল্পে
সরকারি মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫০ কোটি ডলার অর্থায়ন করা
হয়েছে জানিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত জানান, ‘বিপুল পরিমাণ ব্যয় করার পরও
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ আসেনি। ব্যহত হয়নি সামষ্টিক অর্থনীতির
স্থিতিশীলতা।’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ফলে রাজস্ব আহরণ অনেক বাড়বে।’
মাওয়া
এক্সপ্রেসওয়ের আদলে দেশের অন্যান্য মহাসড়কগুলো নির্মাণের পরামর্শ দেন
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর
ফলে ঢাকায় যানজট যাতে না বাড়ে, সে জন্য অনেকগুলো রিং রোড তৈরি করতে হবে।
সিপিডির
সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, পদ্মা সেতু হলে অর্থনীতি
একীভূত হবে। বিনিয়োগ হবে মূল চালিকাশক্তি। এ ছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল,
মিয়ানমারসহ উপ-আঞ্চলিক জোটে পদ্মা সেতু বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।
পদ্মা
সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনের ব্যাপক
সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে জানান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি
জসিম উদ্দিন।
পদ্মা সেতু অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে বলে
জানান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির
হোসেন। দক্ষিণাঞ্চলে অঞ্চলে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য গ্যাস সরবরাহের দাবি
জানান এই শীর্ষ ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সালাম
মুশের্দী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।
সক্রিয় হবে মোংলা বন্দর।’
পদ্মা সেতু নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের
বিরদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মানহানি মামলা করার দাবি জানান দ্য ডেইলি
অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল
আহসান বুলবুল বলেন, ‘নাম দিলেই কি আর না দিলেই বা কি, পদ্মা সেতু যতদিন
থাকবে শেখ হাসিনার নাম ততোদিন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে থাকবে।’
যশোর,
কৃষ্টিয়া, ঝিনাইদাসহ দেশের আরও ১৬ জেলাকে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করতে দ্বিতীয়
পদ্মা সেতু তৈরির তাগিদ দেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙা টিভির বার্তা
প্রধান রেজওয়ানুল হক।
স্বাগত বক্তব্যে পদ্মা সেতুকে দেশের গর্ব বলে
মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বিজেএমইএ-এর
সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু সেতু নয়। দেশের
অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন আওয়ামী লীগের
শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ফজলে
ফাহিম। সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ।