সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি
কিছুটা কমলেও মানুষের দুর্ভোগ খুব একটা কমেনি। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল এখনো
পানিতে নিমজ্জিত। ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি এখনো
অপরিবর্তিত। সেই পানি দ্রুত নেমে আসছে।
ভারি বৃষ্টিপাত এখনো অব্যাহত
আছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আবারও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায়
সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হয়। জকিগঞ্জের অমলসিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃহস্পতিবার বিকেলে
বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। নতুন করে পানি বাড়তে শুরু করেছে
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেও। বৃহস্পতিবার ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি
বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম সদর ও
উলিপুর উপজেলার অন্তত ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত
৫০ হাজার মানুষ। দিনাজপুরে প্রধান তিনটি নদী পুনর্ভবা, আত্রাই ও ছোট
যমুনার পানি বাড়ছে। বৃহস্পতিবার আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে আত্রাইয়ের দুই তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীগর্ভে চলে
গেছে অনেক বাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালা। পঞ্চগড়েও করতোয়ার পানি বেড়ে বিভিন্ন
এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলায় যমুনা নদীর পানি তৃতীয় দফায় বাড়তে
শুরু করেছে।
এ বছর বন্যার প্রকোপ তুলনামূলক অনেক বেশি। উজান থেকে আসা
ঢলের কারণে এপ্রিল মাসের শুরুতেই হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যা দেখা দেয়। ডুবে যায়
সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ আশপাশের জেলাগুলোর নিচু এলাকা।
তাতে হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। জুন মাসে শুরু
হয় আরেক দফা বন্যা। তাতেও জমিতে বেড়ে ওঠা আউশ ধান, পাট, বাদামসহ অন্যান্য
ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপদ্রুত এলাকায় হাজার হাজার পুকুরের মাছ ভেসে
গেছে। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালনকারীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। আরো বড়
ক্ষতি হয়েছে অবকাঠামোর। বহু বাড়িঘর ধসে গেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা
যায়, কেবল সুনামগঞ্জ জেলায় দুই হাজার ২০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। ধারণা করা হয়, সারা দেশে বন্যার ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে
যেতে পারে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ১১টি উপজেলা ও চারটি
পৌরসভায় চার হাজার ৭৪৫টি ঘরবাড়ি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আংশিক
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪১টি ঘরবাড়ির। একই অবস্থা আরো অনেক জেলায়ই।
বন্যা ও নদীভাঙনে অনেক পরিবার পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তদুপরি
বন্যাকবলিত এলাকায় কৃষি বা অন্যান্য কাজকর্মের সুযোগ না থাকায় দিনমজুর
শ্রেণির মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে অন্য সব
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিলিতভাবে যে ক্ষতি করে তার চেয়ে অনেক বেশি আর্থিক
ক্ষতি করে কেবল বন্যা। আর বন্যার এমন তীব্রতার প্রধান কারণ নদীগুলো ভরাট
হয়ে যাওয়া। তাই বন্যার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকার হিসেবে খননের মাধ্যমে নদীগুলোর
নাব্যতা বাড়াতেই হবে। তার আগে দুর্গত মানুষের জীবন রক্ষায় সর্বাত্মক
প্রচেষ্টা চালাতে হবে।