ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
দেবিদ্বার পৌরসভা : বাড়তি করের ‘বোঝায়’ পৌরবাসীর অসন্তোষ
Published : Sunday, 3 July, 2022 at 12:00 AM, Update: 03.07.2022 1:30:41 AM
  দেবিদ্বার পৌরসভা : বাড়তি করের ‘বোঝায়’ পৌরবাসীর অসন্তোষ শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
প্রতিষ্ঠার প্রায় ২০ বছর পরও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পায়নি কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভা। তাই সেবার মান নিয়ে পৌর নাগরিকদের রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ। ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না নাগরিকদের। বিশেষ করে হোল্ডিং টেক্স (কর) বৃদ্ধি নিয়ে বাসিন্দারে মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। পৌরসভায় সেবার মান না বাড়লেও  অতিরিক্ত কর থেমে নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ গুন পর্যন্ত হোল্ডিং টেক্স বাড়ানো হয়েছে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি নিয়ম অনুযায়ী ৫ বছর পর পর টেক্স বাড়ানোর কথা, কিন্তু করোনার প্রকোপ চলাকালে গত তিন বছর কর বাড়ানো হয়নি। এখন নিয়মমাফিক কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০জন বাসিন্দার গৃহ করের পুন:বিবেচনা আবেদন ঝুলে আছে।
২০০২ সালে দেবিদ্বার পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ২০ বছর কেটে গেছে। সীমানা সংক্রান্ত একাধিক মামলায় আটকে আছে পৌরসভার নির্বাচন। শুরু থেকেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় কাঙ্খিত উন্নয়ন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ একাধিক পৌরবাসীর। পৌরবাসীর অভিযোগে তাঁরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। সেবা নিতে হয়রানির বিষয়টি প্রতিদিনের ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে সেবার মান না বাড়লেও গৃহকরের বোঝা বাড়ছেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাসা-বাড়িতেও বেড়েছে করের বোঝা। এতে করে যেন নাভিশ্বাস উঠতে থাকে সাধারণ মানুষের। বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর বৃদ্ধি পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ গৃহকর বৃদ্ধির নোটিশ ফেসবুকে শেয়ার  করছেন। এছাড়াও জন্মসনদ, জন্ম নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট, জন্ম-মৃত্যুর সনদ পেতে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ। সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।  
পৌরসভা সূত্র জানায়, কর আদায় ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি গ্রাহকদের আপত্তির শুনানি করছেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সহায়তা কমিটির সদস্য মো. হাসান আলী কমিটির আহ্বায়ক। পৌর প্রশাসক  মো. আশিক উন নবী তালুকদার কমিটির অন্যতম সদস্য। এ ছাড়াও কমিটিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন, পৌরসভার ৩জন কর্মকর্তা ও দুই জন সহায়তা কমিটির সদস্য। ১৮ দশমিক ১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে লোকসংখ্যা রয়েছে প্রায় ২৭ হাজার ৯১৩জন। হোল্ডিংধারীর সংখ্যা ১১ হাজার। এর মধ্যে ৫ ও ৮ নং ওয়ার্ডের প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দাকে গৃহকরের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।  এর মধ্যে আপত্তি দিয়েছেন প্রায় ৬০০জন। বিধি অনুসারে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করলে পুন:বিবেচনা করবেন কমিটি।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একটি সূত্র বলছে, পৌরসভার কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে অভ্যান্তরীণ কোন্দল। একে অপরের বিরুদ্ধে নারীগঠিত ও অর্থআত্মসাৎ সহ তুলছেন নানা অভিযোগ। এর মধ্যে কয়েকটি অভিযোগ প্রকাশ্যে এলে এর তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পৌর প্রশাসক মো. আশিক উন নবী তালুকদার। যা এখনও তদন্ত চলমান রয়েছে। ছোট আলমপুরের নাজমুল হাসান নাহিদ ফেসবুকে গৃহ করের নোটিশ ফেসবুকে শেয়ার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানায়, গত বছর আমাদের বাড়ির পৌর কর জমা দিয়েছি ৬০০ টাকা এ বছর তা বেড়ে ৩ হাজার ৯০০ করা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে পৌর কর দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। অথচ পৌরসভায় গেলে ভোগান্তির অন্ত নেই।
স্থানীয় ডিস ব্যবসায়ী আবদুল মবিন জানান, গত কয়েক বছর পৌর কর জমা দিয়েছি ৫০০ টাকা করে। এ বছর তিনতলা বাড়ির কর এসেছে ৯হাজার টাকা এভাবে নাকি আগামী পাঁচ বছর দিতে হবে। স্থানীয় পৌর বাসিন্দা ইকবাল হোসেন রুবেল বলেন, যে হারে পৌর কর বাড়িয়েছে সে তুলনায় সেবার মান বাড়েনি। মানুষ নানা ভোগান্তিতে আছে পৌরসভার কার্যক্রম নিয়ে। এভাবে একটি পৌরসভা চলতে পারে না। পৌরসভার কর আদায়কারী রাকিবুল হাসান বলেন, গত তিন বছর করোনার কারণে কর বৃদ্ধি করা হয়নি। পৌরসভার হোল্ডিং টেক্স ৭%, পয়: বর্জ্য নিস্কাষণ ৪% ও পৌর এলাকায় লাইটিং ২% এ হারে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। অনেকের আগে টিনের ঘর ছিলো বর্তমানে তিনি ৪/৫ তলা ভবন  নির্মাণ করেছেন তাদের গৃহকর ও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।  পৌরসভার একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন, এ জন্য নির্বাচন আটকে আছে। উন্নয়নের স্বার্থেই দ্রুত নির্বাচন চান পৌর নাগরিকরা।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক আশিক উন নবী তালুকদার বলেন,  নোটিশে স্পষ্ট লেখা আছে যারা আবেদন করবে তাদের আবেদন যদি যোক্তিক হয় তাহলে শুনানীর মাধ্যমে কর কমানোর বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া গৃহকর নির্ধারণ কারও একক সিদ্ধান্তে হয়নি প্রতিটি ওয়ার্ডের সহায়তা কমিটির সদস্যরা ছিলেন সকলের সিদ্ধান্তে গৃহ কর নির্ধারণ করা হয়েছে।