বাংলাদেশের
রপ্তানি খাত ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। প্রথমবারের মতো
দেশের মোট পণ্য রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে মোট পণ্য
রপ্তানি হয়েছে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই সময়ে মোট সেবা রপ্তানি হয়েছে আট
বিলিয়ন ডলারের বেশি।
সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য এটি এক অভাবনীয় সাফল্য।
করোনার
ধাক্কা কাটিয়ে গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে। ২০২০-২১
অর্থবছরে মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছিল তিন হাজার ৮৭৫ কোটি বা ৩৮.৭৫ বিলিয়ন
ডলারের কিছু বেশি। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছে পাঁচ হাজার
২০৮ কোটি বা ৫২.০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই সময়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি
হয়েছে ৩৪.৩৮ শতাংশ। এই আয় গত অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে
১৯.৭৩ শতাংশ বেশি। অথচ গত অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দিয়ে।
এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি কম হয়েছিল ১১.১৯ শতাংশ।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের সাফল্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।
পণ্য রপ্তানিতে বরাবরের মতো গত অর্থবছরেও শীর্ষস্থানে রয়েছে দেশের তৈরি
পোশাক খাত। সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে মোট চার হাজার ২৬১ কোটি বা ৪২.৬১ বিলিয়ন
ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা মোট রপ্তানির ৮১.৮১ শতাংশ। এ খাতে
রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫.৪৭ শতাংশের বেশি। অন্যান্য খাতের সাফল্যও কম
নয়। তৈরি পোশাক খাতের বাইরেও মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলারের
কাছাকাছি। এর মধ্যে হোম টেক্সটাইল খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ১৬২ কোটি ১৯ লাখ
ডলার। চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য রপ্তানিতে ৩২.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করায়
সামগ্রিক রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে
১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ফলে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলার।
রপ্তানি
খাতের এই প্রবৃদ্ধি আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং উত্তরোত্তর তাকে আরো এগিয়ে
নিতে হবে। রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, চলতি অর্থবছরেও আমাদের এই
প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং পণ্য ও সেবা মিলিয়ে রপ্তানি আয় ৬৫ বিলিয়ন
ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, বিশ্বজুড়ে এখনো করোনার
তাণ্ডব চলছে। এর ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বিশ্ব
অর্থনীতিতে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে
রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এ জন্য আমাদের এখন
থেকেই ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনীতি
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশকে পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং পণ্যের গুণগত উৎকর্ষের
ওপর আরো বেশি জোর দিতে হবে। বাজার সম্প্রসারণে অনেক বেশি উদ্যোগ থাকতে হবে।
বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। বেশি করে
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি অবাধ বাণিজ্যচুক্তি বা এফটিএ স্থাপন
করতে হবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের যে প্রবৃদ্ধি তৈরি হয়েছে,
চলতি অর্থবছরেও তা অব্যাহত থাকবে।