আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র রাজমিস্ত্রেী মেহেদী হাসান শান্ত (২৫) খুন হয়। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে ঈদের আগের দিন বিকালে। এ ঘটনায় প্রকৃত হত্যাকারী কে এ নিয়ে চলছে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। কেউ কেউ বলছেন সাজিদের এলোপাতারি ছুরিকাঘাতে ৫জন গুরুতর আহত হয়। এর মধ্যে শান্ত ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বাকি চারজন কুমিল্লা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর একটি পক্ষ সাজিদ ও আল আমিনের বাক বিতÐায় থামাতে গিয়ে আল আমিনের ছুরিকাঘাতে শান্ত’র মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন। দুই পক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে ধোয়াশা বাড়ছে।
এদিকে, নিহতের বাবা জাকির হোসেন ওই রাতেই বাদী হয়ে আল আমিন ও ক্যানসার আক্রান্ত সাদ্দামসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০/২৫ অজ্ঞাতনামা আসামি করে অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত আসামি সাদ্দাম ও প্রতিবন্ধী মোখলেছকে গ্রেফতার করে।
ক্যান্সার আক্রান্ত সাদ্দামকে গ্রেফতার করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপার চলছে। নুরপুর এলাকার স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানায়, প্রকৃত আসামীদের বাদ দিয়ে যে দূর থেকে ঘটনা দেখেছে তাকে আসামী করা হয়েছে, এটি নিন্দনীয় ও প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। সাজিদকে গ্রেফতার করা হলে সেই প্রকৃত ঘটনা স্বীকার করবে।
কুমিল্লা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন মো. আশরাফুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, রাসেল মিয়া ও ছিকাব আলম জানায়, আল-আমিনের সঙ্গে সাজিদের বাকবিতণ্ডা হয়েছে ও্ই মুহুর্তেই সাজিদ উত্তেজিত হয়ে সামনে থাকা সবাইকে ছুরিকাঘাত করে। তার হাতে (সুইচ গিয়ার) ছুরি ছিলো। সে একাই এলোপাতারি ছুরিকাঘাত করেছে। শান্ত তাকে থামাতে এসে তার ছুরিকাঘাতেই মারা গেছে। সাদ্দাম এ ঘটনায় জড়িত নয়। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটেছে দোকানের সামনে সবাই দেখেছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানায়, সাজিদ ও নিহত শান্ত একই বাড়ির মামাতো ফুফাত ভাই। ঘটনার সময় উত্তেজিত সাজিদকে থামানোর চেষ্টা করেন শান্ত, সাজিদের এলোপাতারি ছুরিকাঘাতে শান্ত মারা যায়। সাজিদ প্রভাবশালী ও অর্থের মালিক হওয়ায় একটি চক্র তার পক্ষ নিয়েছে ।
সাদ্দামের বড় দুই ভাই জহিরুল ইসলাম জানান, সাদ্দাম গত ২ বছর ধরে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাকে ১১ বার কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছে। ১৩ জুলাই ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে কেমোথেরাপি দেয়ার কথা রয়েছে। সে ঘটনার সময় দাঁড়িয়ে ঘটনাটা দেখছে এবং হত্যার ঘটনার স্বাক্ষী দিতে চেয়েছিল। অথচ পুলিশ তাকে স্বাক্ষী হিসেবে ডেকে নিয়ে আসামি করে ঈদের দিন জেলহাজতে প্রেরণ করে। আমার ভাই যা দেখেছে প্রকাশ করতে চেয়েছে অথচ তাকেই আসামি করা হয়েছে।
সাদ্দামের অপর বড় ভাই জাহিদ হাসান বলেন, আমি ফতেহাবাদ ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলাম। এতে আমার প্রতিপক্ষরা অসন্তোষ হয়েছিল। এই হত্যাকাÐটি তারা ইস্যু করে মূল ঘাতককে আসামি না করে আমার ক্যান্সার আক্রান্ত ভাইকে আসামি করে। এখানে ঘাতকের সাথে কোটি টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
নিহত শান্ত’র মা মরিময়ম বেগম বলেন, আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। তিনি আর কিছু বলতে পারেননি।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, বাদিপক্ষ যদি সাজিদকে আসামি না করে, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। তারা ক্যান্সার রোগী সাদ্দামকে আসামি করেছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। আসল ঘটনা বের হবে।