অপরাধমূলক
কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে গুরুতর অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। ঈদের ছুটিতেও দেশের
বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
সংবাদমাধ্যমে
প্রকাশিত খবরগুলো থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা
পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। ঈদের তৃতীয় দিন গত মঙ্গলবার দুপুরে প্রকাশ্য
হামলায় নিহত হয়েছেন যশোর জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি।
স্বজন ও
এলাকাবাসী বলছে, এলাকার নিয়ন্ত্রণ ও সালিস-বিচার নিয়ে বিরোধের জেরে এই
হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার খদ্দরহুয়া গ্রামে গত সোমবার
স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতার সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার
খবর এসেছে। আহত এক ব্যক্তি গত মঙ্গলবার ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
মারা গেছেন। কুমিল্লার দেবীদ্বারে নূরপুর গ্রামে শনিবার বিকেলে মাদরাসার
সভাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক কিশোর নিহত এবং চারজন গুরুতর আহত
হয়েছেন। গত শনিবার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কল্যাণী
গ্রামে শোবার ঘর থেকে এক আনসার সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কুমিল্লার
বড়দৈল গ্রামে এক তরুণকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে শরীরে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে
হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাটোরের নলডাঙ্গার জোয়ানপুরে সোমবার রাতে
পারিবারিক কলহের জের ধরে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। ঈদের দিন ভোলা সদর উপজেলার
আলীনগর ইউনিয়নের চরছিফলী গ্রামে প্রতিবেশী দম্পতির ঝগড়া থামাতে গিয়ে বঁটির
আঘাতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রামের চকবাজার থানার ডিসি রোডের
মৌসুমি আবাসিক এলাকায় ছুরিকাঘাতে এক ডিশ ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গোপালগঞ্জের
মুকসুদপুরে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার সকালে
ঢাকার দক্ষিণখানে একটি অ্যাম্বুল্যান্স থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে
পুলিশ। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায় ছুরিকাঘাতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সোমবার বিকেলে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন।
প্রতিদিন
হানাহানির ঘটনা ঘটছে। উদ্ধার হচ্ছে মৃতদেহ। ক্ষমতা কিংবা ব্যাবসায়িক
দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘটছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। কোথাও রাজনৈতিক কারণে, কোথাও
ব্যাবসায়িক কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সামান্য ঘটনায়ও চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিতীয়বার ভাবছে না কেউ। সমাজের বেশির ভাগ মানুষই যেন আজ
মানবিক বোধশূন্য।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে হবে, অন্যথায় এ থেকে
উদ্ধারের কোনো পথ পাওয়া যাবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকেই এ ব্যাপারে
প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যাবে না। এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না
পারলে আগামী দিনে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক
ধরনের নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে। অন্যদিকে অপরাধীচক্র আরো সক্রিয় হবে। এ
জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে।