ভবনের পিলারে ফাটল ধরেছে বহু আগে। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বেরিয়ে গেছে ভেতরের ইট। এ জরাজীর্ণ অবস্থা কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ৭০নং গুনাইঘর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের। এ ভবনের সবগুলো শ্রেণিকক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে শিশু থেকে ৫ম শ্রেণির পাঠদান করা হচ্ছে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা রয়েছেন আতঙ্কে।
জানা গেছে, ৭০নং গুনাইঘর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪১ সালে গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের গুনাইঘর বাজার সংলগ্নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরে ১৯৯৪-৯৫ সালের ৩ জুন এলজিইডির অর্থায়নে নির্মিত একতলা ভবনটির উদ্বোধন করে তৎকালীন সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুিন্স। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এলজিএসপি-২ অর্থায়নে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের ছাদ মেরামত ও সংস্কার করা হয়। মেরামতের কয়েক বছর না যেতেই ভবনটি পুনরায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় বিদ্যালয়টি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোহাগ জানান, এ স্কুলে আমরা লেখা পড়া করেছি। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী পুরানো স্কুল। আগের মত এ স্কুলে এখন আর লেখা-পড়া হয় না। তিনি আরও বলেন, এ স্কুলে কোন শহীদ মিনার নেই। প্রধান শিক্ষক নাছিমা বেগম ২৫ হাজার টাকার বরাদ্দ পেয়েছেন নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য। কিন্তু তিনি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে টয়লেটের পুরানো ইট দিয়ে যেনতেন ভাবে একটি শহীদ মিনার বানিয়েছে। এছাড়া স্কুলের দেয়াল, পিলার ফাটল ধরেছে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, স্কুলটিতে দিন দিন লেখা পড়া মান কমছে। প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার নিয়মিত স্কুলে আসেন না। এ স্কুলে শিক্ষার কোন পরিবেশ নেই। জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিশুরা ক্লাস করছে প্রতিদিন। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্বাস্থ্যকর টয়লেটের সংকট রয়েছে। এগুলো দ্রুত সমাধান করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার বলেন, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও সেখানে ক্লাস নেওয়া হয়। এ কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরাও। বিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। উর্ধতন কর্মকর্তাদের কয়েক দফা লিখিত দেওয়ার পরও কাজ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, স্কুলের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য আবু ইউসুফ নামে একজন পিয়ন রাখা হয়েছে। তিনি মাসের একদিনও স্কুলে আসেন না। স্কুলে না এসেই বেতন নিচ্ছেন। তার সাথে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। পরে আমি দুই হাজার টাকা দিয়ে অন্য একটি মহিলা নিয়োগ দিয়েছি। আপনিও স্কুলে নিয়মতি আসেন না এমন একটি অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কয়েকজন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি আসার পর স্কুলের অনেক কাজ করেছি, স্কুলের সবাই জানে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেরা সুলতানা বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি খুবই জরাজীর্ণ। এখানে বাচ্চারা ঝুঁকি ক্লাস করতে হচ্ছে। ভবনটি ভেঙে দ্রুত সংস্কার করা না হলে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
দেবিদ্বার উপজেলা শিক্ষা অফিসার শরীফ রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারী ভাবে ভবনের জন্য লিখিত দেয়া হয়েছে। আশা করছি শিগ্রই নতুন ভবন বরাদ্দ হবে।