ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লার ব্যাংক কর্মকর্তা সোহাগের চোখে মীরসরাইয়ের দুর্ঘটনা
Published : Saturday, 30 July, 2022 at 12:00 AM
রণবীর ঘোষ কিংকর: কুমিল্লার চান্দিনা সোনালী ব্যাংকে কর্মরত সিনিয়র অফিসার নাজমুর রশিদ সোহাগ। পারিবারিক কাজে কুমিল্লা থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা তাঁর। কুমিল্লার রেল স্টেশন থেকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতী এক্সেপ্রেসে উঠেন তিনি। ট্রেনের টিকেট অনুযায়ী ইঞ্জিন ঠিক পিছনের ‘ক’ বগিতে আসন তার।
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে মাইক্রোবাসের সাথে ট্রেনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী তিনি। তার দেওয়া লোমহর্ষক তথ্যে জানা যায় হৃদয় বিদারক ঘটনার আদ্যপ্রান্ত।  মীরসরাইয়ের বারতাকিয়া রেল ক্রসিংয়ে ছিল না কোন বাঁধা। অসাবধানতা বসত বাঁধাহীন ওই রেল ক্রসিং অতিক্রম করতে নিমিশেই নিথর ১১টি তাঁজা প্রাণ।
ব্যাংক কর্মকর্তা নাজমুর রশিদ সোহাগ জানান, একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতী কুমিল্লা রেল স্টেশনে পৌছায় সকাল সাড়ে এগারোটায়। আমাদের আসন ইঞ্জিন সংলগ্ন "ক" বগিতে। ট্রেন ফেনী জংশন পার হয়ে কিছুদুর চলার পর বৃষ্টি শুরু হয়। ট্রেন তখন বারতাকিয়া রেল স্টেশন, মীরসরাই এর কিছু আগে। এমন সময় ভয়াবহ একটি শব্দ হয় একই সাথে খুবই জোরে একটি ঝাকুনি লাগে। জানালা দিয়ে ধোঁয়া আসতে থাকে। লোকজন ট্রেনে আগুন লেগেছে বলে দিগি¦দিক ছুটোছুটি করতে থাকে। আমি জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি ভয়াবহ সেই দৃশ্য। ট্রেন তখনো ৭০-৮০ কিলোমিটার গতিতে ছুটছে। সাথে মুসলধারে বৃষ্টি। দেখলাম ইঞ্জিনের সাথে একটি কার আটকে আছে। ট্রেনটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে থামে। সাথে সাথে ট্রেনের যাত্রী ও এলাকাবাসী উদ্ধার অভিযান শুরু করে। দুজন জীবিত মানুষ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের অবস্থা আশংকাজনক। একজনের কিছুই হয়নি। সে ট্রেনের প্রথম ধাক্কায় ছিটকে পরে যায়। সে দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে আসে। তার সাথে আমার কথা হয়েছে। ওই যাত্রীর তথ্য অনুসারে তারা ১৬ জন মাইক্রোবাসে চড়ে খৈয়াছড়া ঝরনা দেখে ফিরছিল। ট্রেনের লেবেল ক্রসিংয়ে বিনা বাধায় ঢুকে পড়েছিল। কোন সিগন্যাল বা ব্যারিকেডও ছিল না। প্রায় ২৫/৩০ মিনিট পর ফায়ারসার্ভিস ও পুলিশ আসে। ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রায় ৩ ঘন্টা পর একটি উদ্ধারকারী ইঞ্জিন এসে চেন দিয়ে টেনে মাইক্রোবাস টি ট্রেনের নীচ থেকে বের করে। তারপর সন্ধ্যা ৬টায় আমরা চট্টগ্রাম পৌছি। আজকের এই মর্মান্তিক ঘটনা কখনো ভুলার নয়। আমি নিহত সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।