আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের ছাত্র-শিক্ষকরা মিলে মীরসরাইয়ে আনন্দভ্রমণ শেষে ফিরেছেন লাশ হয়ে। জানাযায় তাদের নিথর মুখ দেখে কান্না আটকাতে পারেননি অনেকে।
নিহত ১১ জনের মধ্যে কয়েকজনের বাড়ি হাটহাজারীর আমানবাজার থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে খন্দকিয়া গ্রামে।
এই গ্রামের মানুষ এখন শোকে স্তব্ধ। এলাকার লোকজন মেনে নিতে পারছেন না মেধাবী তরুণদের অকাল মৃত্যু। নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই।
শনিবার (৩০ জুলাই) হাটহাজারীর খন্দকিয়া ছমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত জানাযায় নামে মানুষের ঢল। এলাকার একসঙ্গে এতগুলো তরুণের চলে যাওয়া এলাকাবাসীর কাছে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। তারা চান গেটম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
এই মাঠে জানাযা হয় রিদোয়ান, সজীব, মারুফ, হাসান ও নিরুর। এছাড়া নিহত হিসামের জানাজা হয় শিকারপুরের নিজ বাড়িতে। সাগর ও মাহিমের জানাজাও সম্পন্ন হয় পারিবারিকভাবে। এর আগের রাতে শুক্রবার সাজ্জাদ, রাকিব ও জিসানের দাফন সম্পন্ন হয়।
খন্দকিয়া গ্রামের যুগীর হাট বাজার পেরিয়ে মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা নিরুর (২৬) বাড়ি। স্বামীর দাফন হয়েছে, কন্যা রুহি আক্তারকে বুকে জড়িয়ে রেখে কান্না থামছে না স্ত্রী রুপা আক্তারের। পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তাদের। পুত্রশোকে কাঁদছেন গোলাম মোস্তফার বাবা মো. ইউসুফ।
একই এলাকায় কলেজ শিক্ষার্থী জিয়াউল হকের বাড়িতে বিলাপ করছেন মা শাহনাজ আক্তার। ওই বাড়ির পাশে নিহত ইকবাল হোসেনের নানার বাড়ি। মায়ের সঙ্গে এখানেই কেটেছিল শৈশব-কৈশোরকাল। সে কেএস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সেখানেও ভিড় করছেন মানুষ।
এর প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে নিহত ওয়াহিদুল আলমের বাড়ি। তিনি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা করতেন সেই কোচিং সেন্টারে। তার বাবা জানে আলম কান্না করার শক্তি হারিয়েছেন।
খন্দকিয়া গ্রামের আবদুল লতিফ মাস্টারের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। ওমরগণি এমইএস কলেজে গণিত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জিয়াউল কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন। কিছুক্ষণ পর পর নিজের বুক চাপড়াচ্ছেন মা শাহনাজ আক্তার। বলছেন, ‘আমার মাস্টার সজীব কই?’ বাবা আবদুল হামিদ সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ।
প্রিয়জনকে হারানোর এই শোক পরিবারগুলো কতদিনে কাটিয়ে উঠবেন- তা বলা কঠিন। হাতে লেগে থাকা কবরের মাটির ঘ্রাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের হৃদয়ের ক্ষত।
খবর-বাংলানিউজের