বলা
হয়ে থাকে, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ গণসেবাগুলো জনমুখী নয়। সে কারণেই জরুরি
সেবা নিতে গিয়ে নানা সমস্যা ও হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
দুদকের
তথ্য মতে, প্রতিবছর জিডিপির একটি বড় অংশ ক্ষতি হয় দুর্নীতির কারণে। টিআইবি
ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায়, ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি।
সেবা
খাতে যদি এত অনিয়ম-দুর্নীতি থাকে, তাহলে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের হেফাজত করবে
কে? সে কারণেই অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে, সেবা নিশ্চিত করে দূর করতে
হবে ভোগান্তি।
সেবা খাতগুলোর মধ্যে কোনটিতে দুর্নীতি নেই? কোন সেবা
নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয় না, তা বলা মুশকিল। বাংলাদেশে সবচেয়ে
বেশি ভোগান্তি সম্ভবত হয় ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে। জমিজমা নিয়ে জালিয়াতির অনেক
ঘটনা ঘটে। এ নিয়েই বোধ হয় মামলা সবচেয়ে বেশি। অনেক মামলার নিষ্পত্তি হতেও
দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন, বাংলাদেশের ভূমি
ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। জমিজমাসংক্রান্ত যেকোনো
সেবা পেতে গেলেই ঘাটে ঘাটে অর্থ ব্যয় করতে হয়। অবৈধভাবে খাসজমি দখল থেকে
শুরু করে প্রভাবশালীদের নামে জমির নামজারি করার ঘটনাও ঘটে থাকে। মাঠ
পর্যায়ের ভূমি জরিপকর্মী থেকে শুরু করে সব পর্যায়েই চলে টাকা লেনদেন।
এমন
অভিযোগ এসেছে গত বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ
কমিটি চট্টগ্রাম আয়োজিত গণশুনানিতে। এক যুবক জানিয়েছেন, ভূমি অধিগ্রহণে ৩৮
শতক জায়গার ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য তাঁর মা ৪০ বছর ধরে বন্দর ও জেলা
প্রশাসনের দুয়ারে ঘুরছেন। যারা এই ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করেছে, তাদের
উল্টো ভূমি ও টাকা দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
চার ঘণ্টা ধরে চলা
গণশুনানিতে ৪৭টি অভিযোগ ওঠে। গণশুনানিতে চট্টগ্রাম নগরে অবস্থিত সরকারি ও
স্বায়ত্তশাসিত আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীতারা অভিযোগ
করেছেন। বেশির ভাগ অভিযোগ ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পাসপোর্ট অফিস এবং
আগ্রাবাদ ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের
বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। সারা দেশেই তো একই অবস্থা। দেশের দরিদ্র
মানুষের কাছে এখনো প্রধান ভরসা সরকারি হাসপাতাল। অভিযোগ আছে, সেখানে রোগীরা
ঠিকমতো সেবা পায় না। সরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসককে কর্মসময়ের মধ্যেও
নিজ কর্মক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। তাঁরা সে সময় প্রাইভেট ক্লিনিক বা
হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। অনেক চিকিৎসক নামে-বেনামে একাধিক ক্লিনিক খুলে
ব্যবসা করছেন। উপজেলা পর্যায়ের অনেক হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের
এক-চতুর্থাংশকেও হাসপাতালে পাওয়া যায় না। সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে
মেশিনসহ অনেক যন্ত্রপাতিই বিকল হয়ে থাকে, রোগীদের পাঠানো হয় নির্দিষ্ট
ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের একটি বড় অংশেরই কোনো
অনুমোদন নেই। যেগুলোর অনুমোদন আছে, সেগুলোও সঠিকভাবে নিয়ম-কানুন মানে না।
সেবা
নাগরিকের অধিকার। সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া আইনের বরখেলাপ। গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে
সমান এবং আইনে সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। ’ ভোগান্তি দূর করে সরকারি সেবা
নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এটাই প্রত্যাশা।