Published : Monday, 5 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 05.09.2022 1:04:36 AM
মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর ।।
ইবন
মিয়া (৩০) নামে এক যুবককে প্রকাশ্য দিবালোকে ৫ টুকরো করে বস্তায় ভরে গুম
করার অভিযোগ ওঠেছে। সে সময় সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ মুখ না খুললেও ৩০ বছর পর
এসে আদালতে মামলা করেছে তার ভাগিনা জাফর আহমেদ। বিজ্ঞ বিচারক রোববার
মামলাটিকে এফআইআরভূক্ত করতে বাঙ্গরা বাজার থানাকে নির্দেশ দেন। কুমিল্লার
মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের দিঘিরপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ইবন
মিয়া বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের খামার গ্রামের মৃত আহাদ মিয়ার ছেলে।
মামলা
সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর দিঘিরপাড় তার আত্মীয়ের বাড়িতে
বেড়াতে যায় ইবন মিয়া। যাওয়ার পথে চান মিয়ার মেয়ে জমিলা বেগম (৪৯) ও শুক্করী
বেগম (৫০) তার পথ আগলে দাঁড়ায়। তখন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইবন মিয়ার
সাথে তাদের মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা ইবন মিয়াকে মাসু শাহ্ মাজারের
পূর্ব দিকে পুকুরের পাকা ঘাটলায় নিয়ে যায়। জমিলা বেগম ও শুক্করী বেগমের
ইন্ধনে চান মিয়ার ছেলে ছন্দু মিয়া (৪৭), হানিফ মিয়া (৫০), সাম মিয়া (৪৫),
হামদু মিয়া (৪৮), হামদু মিয়ার স্ত্রী (৪৬) ও লীল মিয়া (৬০) ও হানিফ মিয়ার
স্ত্রী পেয়ারা বেগম (৫০) দা, ছুরি, ছেনি, চাপাতি দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে ইবন
মিয়ার দুই হাত ও দুই পা এবং মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে বিচ্ছিন্ন
অঙ্গগুলো বস্তায় ভয়ে ধনপতিখোলা ও খদ্দরকান্দা সড়কের উত্তরে একটি পুরাতন
বটগাছের গোড়ায় মাটি চাপা দিয়ে রাখে। ঐ দিনই হত্যাকারীরা ইবন মিয়ার স্বজনদের
বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ ৩০ বছর এমন নির্মম হত্যাকান্ডকে বুকে চাপা
দিয়ে অল্প কিছুদিন পূর্বে বাড়ি ফিরে আসে তারা।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে
দীর্ঘ ৩০ বছর পর ইবন মিয়ার ভাগিনা জাফর আহমেদ বাদী হয়ে গত ২৩ আগষ্ট
কুমিল্লার ৮নং আমলী আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে একটি পিটিশন মামলা
দায়ের করেন। আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ওমর ফারুক গতকাল
রোববার পিটিশন মামলাটি এফআইআরভূক্ত করতে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসিকে
নির্দেশ দেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী জাফর আহমেদ দৈনিক
কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ইবন মিয়া সম্পর্কে আমার মামা হয়। আমি তখন ছোট।
ঘটনাস্থলের পাশেই একটি বড়ই গাছ ছিল। ওই গাছে ওঠে আমি বড়ই পারছিলাম। সে
দিনের কথা মনে হলে এখনো আমার গাঁ শিউরে ওঠে। আমার চোখের সামনে তারা আমার
মামাকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করেছে। ঘটনাটি মনে হলে আমি এখনো বাকরুদ্ধ হয়ে
পড়ি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) এডভোকেট
সৈয়দ তানভীর আহমেদ ফয়সাল দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, এ ঘটনার পর থেকে ইবন
মিয়ার স্বজনরা দীর্ঘ ৩০ বছর বাড়ি ছাড়া ছিল। আসামীরা এতই প্রভাবশালী যে,
তাদের বিরুদ্ধে মামলাতো দূরের কথা কেউ মুখ খুলতেও রাজি হয়নি। বিভিন্ন
আদালতে এ সমস্ত ঘটনা গুলোর বিচার হচ্ছে। তাই তারা ৩০ বছর পর এসে ন্যায়
বিচারের আশায় আদালতে মামলা দায়ের করেছে।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি
কামরুজ্জামান তালুকদার দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, এ ধরনের কোন নির্দেশ
আমার হাতে এসে এখনো পৌঁছেনি। আদালতের নির্দেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে।