Published : Wednesday, 7 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 07.09.2022 12:54:38 AM

শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
লেবাননে
সাবরা এলাকায় কুমিল্লার দেবিদ্বারের ব্যবসায়ী শিরিনা আক্তার ও তাঁর মেয়েকে
পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিরিনের মা মনোয়ারা বেগম।
নিহত শিরিনের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলার ধামতি গ্রামে। সোমবার রাতে ধামতি
গ্রামে গিয়ে নিহত শিরিনের মা মনোয়ারা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি
জানান, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে তাঁর স্বামী রাজু ওরফে বেচু
ভাড়াটে লোক দিয়ে বিষ খাইয়ে হত্যা করে আত্মহত্যার করেছে বলে চালিয়ে দিয়েছে।
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত
২১ আগস্ট লেবাননের সাবরা বাজার এলাকায় নিজ বাসা থেকে ব্যবসায়ী শিরিন আক্তার
ও তাঁর যমজ দুই শিশু সন্তান মাহমুদ ও খাদিজাকে বিষক্রিয়া অবস্থায় উদ্ধার
করেন সেখানকার বসবাসকারী কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী। পরে তাদের একটি
হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু খাদিজাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর
একদিন পর মারা যান শিরিনা আক্তার। তবে, বিষক্রিয়া কম থাকায় বেঁচে গেছে শিশু
সন্তান মাহমুদ। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় লেবাননে দাফন করা হয় শিশু
খাদিজাকে। বর্তমানে শারমিনের মরদেহ লেবাননে হিমঘরে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত
শেষে বাংলাদেশে লাশ পাঠানো হবে জানান লেবাননে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
শিরিনের
মা মনোয়ারা জানান, নোয়াখালী জেলার সেনবাগ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ
কাদরা দীন মোহাম্মদ মৌলভী বাড়ীর আবদুল খালেকের ছেলে হাবিবুর রহমান বেচু
ওরফে রাজুর সাথে ২০১২ সালে প্রথমে লেবাননে বিয়ে হয় শিরিনের। বিয়ের পর
শিরিনের ব্যবসা, নিজস্ব দোকান ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে রাজু ও
তাঁর পরিবার। এছাড়াও রাজু লেবাননে প্রবাসী মেয়েদের সাথে পরকীয়া জড়িয়ে পড়লে
শিরিনা তাকে বাধা দিলে তাকে মারধর করত। রাজু ভয়ভীতি দেখিয়ে শিরিনার
ব্যবসার জমানো প্রায় ২০লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় । এরপর আমি লেবানন থাকাবস্থায়
আমাকে অচেতন করে বিষাক্ত ইনজেকশন পুষ করে আমার আলমারি থেকে ১২ লক্ষ টাকা
নিয়ে যায়। ওই ইঞ্জেকশানের পর আমার পা পচন ধরায় আমি বাংলাদেশে চলে আসি। রাজু
তাঁর বোন খালেদা আক্তার রানুর সহায়তায় রাজিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’র
মাধ্যমে দেশ থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লেবাননে কিশোরি
মেয়েদের পাচার করতো। এছাড়াও রাজু লেবাননে ভিসার কথা বলে দেবিদ্বারের
প্রবাসি ইউসুফের ১৬ লাখ, রিমা আক্তারের ৫ লাখ, ধামতি গ্রামের আবু তাহেরের ৪
লাখ, একই গ্রামের কাশেম হুজুরের ৩ লাখ টাকা বিভিন্ন সময়ে প্রায় দেড় কোটি
টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই টাকা ফেরত দিতে আমাকে ও আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে চাপ
প্রয়োগ করে আসছে পাওনাদারেরা। তাঁর বেপরোয়া চলাফেরা, পরকীয়া, যুবতী মেয়েদের
দিয়ে দেহব্যবসা ও পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়লে লেবানন সরকার তাকে
রেডএলার্ট জারি করে।
মনোয়ারা আরও বলেন, শিরিনার নামে ঢাকায় বাড়ী ক্রয়ের
কথা বলে রাজু তার বাবা আবদুল খালেক, ছোট ভাই রাজিব ও বড় বোন খালেদা
আক্তার রানুর নামে বাড়ী ও কারখানা কিনেন রাজু। ওই টাকার হিসেব চাইলে সে
শিরিনাকে নানাভাবে হত্যার হুমকি দিত। বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হওয়ার অপরাধে
রাজুকে লেবাননে নিষিদ্ধ করেলে সে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। লেবাননে রাজুর
নির্দেশে শিরিনার দোকানের কর্মচারী টিটু শিরিনাকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে।
টিটুকেও গ্রেফতারের দাবি জানান শিরিনার মা। নিহত শিরিনার ভাই ফরহাদ বলেন,
শিরিনা তার দুই সন্তানকে খুবই ভালোবাসতেন। দুই সন্তানসহ বিষপানে আত্মহত্যা
করার মত মেয়ে না শিরিনা। তাকে তার স্বামী রাজুর নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে।
আমরা এর বিচার দাবি করছি। এ ব্যাপারে, প্রধানমন্ত্রী, প্রবাসী
কল্যাণমন্ত্রী ও লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা কামনা করেন ফরহাদ ও
শিরিনার মা। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান ওরফে রাজুসহ তাঁর স্বজনদের
সাথে যোগযোগ করার চেষ্টা করলেও কারও সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। দেবিদ্বার
থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, শিরিনাসহ দুই সন্তান বিষক্রিয়ায়
আত্মহত্যার করার খবর পেয়েছি। তারা থানায় আইনি সহায়তা চাইলে তাদের সহায়তা
করা হবে।