কুমিল্লায়
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলুর
ওপর অতি উৎসাহী কেউ হামলার ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী
ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
কামাল। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান।
গতকাল শনিবার বিকেলে কুমিল্লার
মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিপুলাসার এলাকায় নিজ এলাকা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে
ঢাকায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন বরকত উল্লাহ বুলু। হামলায় বরকত উল্লাহ
বুলু, তার সহধর্মিণী শামীম আক্তার লাকী, মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ
সম্পাদক শরীফ হোসেনসহ অন্তত সাত-আটজন নেতাকর্মী আহত হন। স্থানীয় আওয়ামী
লীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা
হয়েছে।
এ হামলার ঘটনায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
উঠেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,
আপনারা বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি মাঠে-ময়দানে হঠাৎ করেই দেখছেন। বিএনপি একটি
রাজনৈতিক দল। আমাদের দেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে। তাদের রাজনৈতিক
স্বাধীনতা রয়েছে। আমাদের সরকার সব সময় বলে আসছে, গঠনমূলক ও
নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করলে বলার কিছু থাকবে না। সরকার মনে করে, সব
রাজনৈতিক দলই সমানভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে।
তিনি
বলেন, কিন্তু সবাইকে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। যখন কেউ ভাঙচুর করবে রাস্তা
অবরোধ করবে কিংবা জনমালের ক্ষতি করবে বা জ্বালাও-পোড়াও করবে তখনই আমাদের
নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। সেটা তারা করছে বলে
বিশ্বাস করি।
মন্ত্রী আরও বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় বিএনপির এক সিনিয়র নেতা
(বরকত উল্লাহ বুলু) আহত হয়েছেন বলে আমরা শুনেছি। এরই মধ্যে তদন্তের
ব্যবস্থা করেছি। এ ঘটনা নিয়ে দু-রকম কথা শুনেছি। ফলে তদন্তের আগে কিছু বলতে
পারবো না। আমি এটুকু শুধু বলতে পারি যদি কেউ এ ব্যাপারে অতি উৎসাহী হয়ে
কিছু করে থাকেন বা কেউ যদি ঘটনাটি ইচ্ছা করে ঘটিয়ে থাকেন, তার বিরুদ্ধে আইন
অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একইদিন (শনিবার) বনানীতে বিএনপি
নেতাকর্মীদের ওপর হামলার যে ঘটনা সেটিও কি অতি উৎসাহী হয়ে কেউ ঘটিয়েছেন- এ
বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বনানীর যে ঘটনা সে
সম্পর্কে না জেনে আমি বলতে পারবো না। ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে অন্য
একদিন আপনাদের ব্রিফ করবো। কেন এসব ঘটছে কীভাবে ঘটছে না জেনে আপনাদের কিছু
বলা উচিত না।
দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা আহত হচ্ছেন,
রক্ত ঝরছে- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কোনো নির্দেশনা থাকবে কি না,
জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এটা দুই দলের (আওয়ামী
লীগ-বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে) ক্ষেত্রেই হচ্ছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের
এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কাজেই একদল মার খাচ্ছে আর একদল ঘরে
বসে আছে, তেমনটা কিন্তু নয়। পাল্টাপাল্টি ঘটনা হচ্ছে, মুখোমুখি হচ্ছে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলে আসছেন, সবারই রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে।
তবে কোনো রাজনৈতিক দল নিয়ম মেনে রাজনীতি করলে, রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে
সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু এসব কর্মসূচি বিধিসম্মত হতে হবে।
এ
পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি স্পষ্ট
করে বলেছি সভা-সমিতি করলে আমাদের কিছু বলার নেই। যদি সভা সমিতি ছেড়ে
সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখনই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যায়। তার আগে কোথাও
নিরাপত্তা বাহিনী যাচ্ছে না।
তাহলে কি নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের
সংঘর্ষ হচ্ছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আরও অনেক সময় রয়েছে।
তবে এখানে কার কী উদ্দেশ্য এগুলো তো আমরা পর্যবেক্ষণ না করে বলতে পারবো না।
অনেকেরই অনেক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আমি সবসময় বলি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী
সবসময় জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করেন। কোনো ষড়যন্ত্র বা বন্দুকের নলে আমরা
বিশ্বাস করি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, সামনে নির্বাচন আসছে সে
নির্বাচনে আবার যদি প্রধানমন্ত্রীকে জনগণ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন তাহলে তিনি
আসবেন। এখানে কোনো ষড়যন্ত্র করে বা বা ভয়ভীতি দেখিয়ে বা কোনো পেশিশক্তির
ব্যবহারে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। তবে যারা এগুলো করবেন তাদের জন্য অশুভ
সংবাদ হলো তারা যদি এগুলো থেকে বিরত না থাকেন তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।