বান্দরবানের
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু পশ্চিমকুল গ্রাম। দক্ষিণ
দিকে ১০০ গজ দূরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের তুমব্রু পাহাড়ে দেশটির বর্ডার
গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সীমান্তচৌকি। চৌকির নিচে ঘাঁটি। ঘাঁটির আশপাশ থেকে
ছোড়া হচ্ছে মুহুর্মুহু গুলি। থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে আর্টিলারি, মর্টার শেলের
গোলা।
গোলার শব্দে কাঁপছে এপারের তুমব্রুর পশ্চিমকুল, ক্যাম্পপাড়া,
বাজার পাড়াসহ অন্তত ১৫ গ্রামের ঘরবাড়ি। এ অবস্থায় সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন
করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও পুলিশ সুপার
তারিকুল ইসলাম।
স্থানীয় পশ্চিমকুল গ্রামের কৃষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের
সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, গতকাল সকালে গোলাগুলি শুরু হয়। চলে
ভোররাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। দেড় ঘণ্টা বিরতি দিয়ে ভোর পাঁচটায় আবার
গোলাগুলি শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৬টির মতো মর্টার শেল ছোড়া
হয়েছে। শব্দে ঘরে থাকা যাচ্ছে না।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি কেন্দ্র পরিদর্শনে যান
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন ও পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ৪৩৩ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী ওই
কেন্দ্রে আজ ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিচ্ছে। সীমান্তে গোলাগুলি ও
অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গত শনিবার থেকে ঘুমধুম কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের
উখিয়ায় সরিয়ে আনা হয়।
পরীক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ার অনুরোধ
জানিয়ে জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন বলেন, মনোবল শক্ত রেখে সুন্দরভাবে
পরীক্ষা দিতে হবে। সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
উখিয়ার
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কুতুপালং এলাকার বিপরীতে কচুবনিয়া সরকারি
প্রাথমিক ও বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। সেখানে ঘুমধুম
সীমান্ত থেকে ৩০০ পরিবার সরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এরপর জেলা প্রশাসক
ও পুলিশ সুপার ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী সূত্র জানায়, ঘুমধুম সীমান্তের পাশে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ১ ও ২
নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৭০-৮০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি
চলছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন,
ভোররাত থেকে ওপারে গোলাগুলি চলছে। থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল। কাঁপছে
এপারের ভূখণ্ড। দুই মাস ধরে চলা মিয়ানমারের গোলাগুলিতে স্বাভাবিক জীবন
যাপন করতে পারছেন না এলাকার হাজারো মানুষ। সীমান্ত এলাকার চাষাবাদ প্রায়
বন্ধ। সীমান্ত এলাকার অন্তত ৩০০ পরিবার নিরাপদ স্থানে
মিয়ানমারের
কাঁটাতারের বেড়ার ৫০ গজ দূরত্বে পশ্চিমকুল গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদের বাড়ি।
সপরিবার বাড়িতে থাকছেন তিনি। আবদুর রশিদ বলেন, ‘কী করব ভেবে পাচ্ছি না,
গোলার আতঙ্কে রাত জেগে বসে থাকতে হচ্ছে।’