সাঈদ হাসান, কুবি ||
কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) পুরো ক্যাম্পাসে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা
দিয়েছে। প্রশাসনিক ভবনের আশেপাশে, মুক্তমঞ্চের পার্শ্ববর্তী এলাকা,
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এবং শহিদ মিনারসহ আশেপাশের পুরো এরিয়া জুড়ে
ক্যাম্পাসের কোথাও নেই নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা। এছাড়াও আবাসিক
হলগুলোতে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের
কেন্দ্রীয় মাঠে খেলতে আসা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খেলার শেষে কিংবা
মধ্যবত্তি সময়ে আমরা সুপেয় পানি পান করতে পারি না। আমাদের একটি
ক্যাফেটেরিয়া সেখানে নামমাত্র তিনটি বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার থাকলেও এমনিতেই
সবসময় প্রচুর ভিড় থাকে। তাছাড়া কিছু কিছু সময় ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ থাকে। ফলে
বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
মাঠে খেলতে আসা লোক
প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোরসালিন বলেন, আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য
প্রতিদিন কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী মাঠে খেলাধুলা করতে আসি। খেলাধুলার শুরু
থেকে মধ্যবতী সময় কিংবা শেষের দিকে আমাদের পানি পিপাসা পায়। তখন পানি পান
করার জন্য থাকেনা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। তখন কষ্ট করে কেন্দ্রীয় মসজিদ
কিংবা ক্যাফেটেরিয়ায় যেতে হয়। যা প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তুলনামূলকভাবে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ খেলার মাঠে
পানির ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেসকল সুবিধা থেকে বরাবরই
বঞ্চিত হচ্ছি।
প্রত্নতত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী চাঁদনি
আক্তার বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের তুলনায় সব জায়গায় বিশুদ্ধ
পানির ব্যবস্থার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। যদিও বিভিন্ন ফ্যাকাল্টিতে পানির
ব্যবস্থা আছে, তবে পর্যাপ্ত নয়। অনেক সময় বিভাগীয় ভবনে গিয়েও বিশুদ্ধ পানি
পাওয়া যায় না। কেন্দ্রীয় ক্যাফেটোরিয়ার পানির ব্যবস্থা মোটেও পছন্দনীয় নয়।
অস্বাস্থ্যকর বেসিন, টেপ থেকে পানি খেতে ইচ্ছে করে না। গ্লাস অথবা মগের
অবস্থাও ভালো নেই।
অনিরাপদ পানি পান করলে পানিবাহিত রোগ থাকে বলে
মন্তব্য করেন কুবি মেডিকেল ডেপুটি চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান
খান। তিনি দেশের কণ্ঠকে বলেন, অনিরাপদ পানি পান করার কারণে প্রতিদিন
পানিবাহিত রোগের সমস্যা নিয়ে ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মেডিকেলে আসেন। বিশুদ্ধ
পানির অভাবে পানিবাহিত রোগ বিশেষ করে ডায়রিয়া, আমাশয়, হেপাটাইটিস 'বি'
ভাইরাসহ টাইফয়েড জ্বর হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো পরিত্রাণের জন্য
নিরাপদ পানির পান করার বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী এস এম
শহিদুল হাসানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের চাহিদা
অনুযায়ী পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকি।
পাশাপাশি কোন ফিল্টার অকেজো হলে, আমাদের অবগত করলে আমরা যথাযথ সময় মেরামতের
উদ্যোগ নেই। কেন্দ্রীয় ক্যাফেটোরিয়ায় তিনটি ফিল্টার শিক্ষার্থীদের জন্য
পর্যাপ্ত কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনটি ফিল্টার শিক্ষার্থীদের জন্য
পর্যাপ্ত কিনা তা আমাদের মন্তব্য করার কোন জায়গা নেই।’
এ বিষয়ে ছাত্র
পরামর্শক ড. মোহা: হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ক্যাফেটোরিয়ায় পানি
বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার যখন ছিল না। তখন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমরা
তিনটি ফিল্টার স্থাপন করি। এখন ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মাঠের আশেপাশে
বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা এ বিষয় যথাযথ
কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো। তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ পানির জন্য মাঠে পাশে যেহেতু
মসজিদ রয়েছে। সেহেতু শিক্ষার্থী এবং মসজিদের মুসল্লিদের জন্য অতিদ্রুত একটি
পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার স্থাপন করাবো।’
ক্যাম্পাসে বিশুদ্ধ পানির
সংকটের বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন,
‘শিক্ষার্থীরা বিশুদ্ধ পানি পান করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সমস্যা সম্মুখীন
হচ্ছে সেই বিষয়ে আমি অবগত নই। তাই এই বিষয়ে আমি তেমনভাবে মন্তব্য করতে
পারছি না।’