ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগ নিন 
Published : Wednesday, 5 October, 2022 at 12:00 AM
তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগ নিন  আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার গবেষণা জরিপে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যে চিত্র এ পর্যন্ত উঠে এসেছে কিংবা এখনো আসছে, তার কোনোটাই আমাদের জন্য সুখকর নয়। এসব গবেষণায় নিকট ভবিষ্যতে ঢাকার সম্ভাব্য অবস্থা নিয়ে যেসব পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, তা আরো উদ্বেগজনক। এই ধারায় সর্বশেষ প্রতিবেদনটি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়ান্স সেন্টার। তাদের ‘হট সিটিজ, চিল্ড ইকোনমিস : ইমপ্যাক্টস অব এক্সট্রিম হিট অন গ্লোবাল সিটিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঢাকাসহ বিশ্বের ১২টি শহরে চরম তাপমাত্রার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকার ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকা এরই মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা ও অতিরিক্ত আর্দ্রতার মধ্যে পড়েছে। এর ফলে ঢাকায় প্রতিবছর ৬০০ কোটি ডলার বা প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবস্থা না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
গ্লোবাল লিভেবিলিটি সার্ভে বা বৈশ্বিক বসবাসযোগ্যতা জরিপে ঢাকার অবস্থান বরাবরই তলানিতে থাকে। বিশ্বসেরা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ২০১৩ সালের জরিপে ঢাকা ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম শহর। আর ২০১৪ সালে মার্সার পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম শহর হলো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সবুজের অভাব, অসহনীয় যানজট, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, নোংরা ও দূষিত পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা, বিনোদনের সুযোগ না থাকা, পার্ক বা খোলা জায়গার অভাব, নানা রকম বিশৃঙ্খলা অর্থাৎ বসবাসযোগ্যতা বিচারের ৩৯টি মাপকাঠির প্রায় সব কটিতে ঢাকার অবস্থান অত্যন্ত নেতিবাচক।
অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়ান্স সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শ্রমঘন শিল্প-কারখানা, ব্যবসাকেন্দ্র ও ঘনবসতির কারণে ঢাকা শহরের কিছু এলাকায় তাপমাত্রা নিকটবর্তী গ্রাম এলাকার তুলনায় ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি। সেই সঙ্গে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরমের অস্বস্তি অনেক বেশি অনুভূত হয়। এতে সেই এলাকার মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হয়। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পোশাক কারখানা, পরিবহন ও ব্যবসাকেন্দ্রে কর্মরত মানুষ। জরিপে উঠে এসেছে, তাপপ্রবাহ চলার সময় ৯ শতাংশ হকারের আয়-রোজগার ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমেই তীব্রতা পাচ্ছে। আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী দিনগুলোতে আরো দ্রুত অবস্থার অবনতি হবে। তাঁদের মতে, দ্রুত এবং সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে না এগোলে শিগগিরই ঢাকা সম্পূর্ণরূপে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। প্রয়োজনে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে রাজধানী ঢাকার বসবাসযোগ্যতা উন্নয়নে আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে এবং যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা চাই, ঢাকায় সুস্থভাবে বসবাসের পরিবেশ গড়ে উঠুক।