তানভীর দিপু:
শরতের
রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে ধবধবে সাদা কাঞ্চন ফুল। সবুজ
পাতার ফাঁকে মুক্তোর মত ফুটে থাকা এই কাঞ্চন ফুলের পরিচয় জানে না এই
প্রজন্মের অনেকেই। বাংলাদেশে বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে কাঞ্চনও একটি।
কাঞ্চনের মত এমন শতাধিক প্রজাতির ৫ হাজারেরও বেশি উদ্ভিদের সংগ্রহশালা
কুমিল্লার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান। অশোক, অশ^থ, আগর, নাগেশ^র, নাগলিঙ্গম, ধুপ
কিংবা তমাল থেকে শুরু করে কাঠ বাদাম, খাট জারুল, শরীফা, সাতকড়াসহ নানান
ফুল ও ফলের গাছ লাগানো পাহাড়ের গায়ে। আছে গোলাপ বাগান, ক্যাকটাস ও অর্কিডের
জন্য আলাদা গ্রীন হাউজ। হিজল, গর্জন, গামার, রক্তচন্দন, শীলকড়ই, বৈলাম,
শাল, মহুয়াসহ অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য গাছ তৈরী করেছে বৈচিত্র্যময় অরণ্যের।
গাছপালার এমন বৈচিত্র্য দেখতে লালমাই পাহাড়ের বুকে এই উদ্যান দেখতে
দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শণার্থীরা। কুমিল্লা নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডে
সালমানপুর কোটবাড়ি এলাকায় ২০১৫ সালে গড়ে তোলা লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান
চট্টগামের সীতাকুণ্ড ও ঢাকার মিরপুরের পর দেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান।
এই বাগানের ৯০ শতাংশ গাছই বিপন্ন এবং দুষ্প্রাপ্য। দেশের পর্যটনের বিশেষ
আকর্ষণ শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি যাদুঘর থেকে খুব কাছে হওয়ায় এই
উদ্যানটিতে ঘুরে যান অনেকেই।
উদ্যান সূত্রে জানা গেছে, অর্জুন,
আমলকি, উড়িআম, কনক, করমচা, কাউ, কদবেল, খাটজারুল, গোলাপজাম, গুটগুটিয়া,
চন্দুল, চালমুগড়া, চাপালিশ, চিকরাশি, ছাতিয়ানি, তুন, ঢাকিজাম, তেলশুর,
বৌদ্ধনারকেল, পিতরাজ, শরবতীলেবু, সিভিট, হরিতকি, সজিনাসহ নানা প্রজাতির
গাছ লাগানো আছে। বর্তমানে এই গাছগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক এবং প্রতিটি গাছের
সামনে নামের বোর্ড লাগানো আছে যেন মানুষ সহজে চিনতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ
থেকে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী আমিরুল সোহাগ জানান, আমরা বৌদ্ধ বিহারে ঘুরতে
এসেছিলাম। পরে এই উদ্যানের কথা জেনে- এখানে আসলাম। এখানে অনেক গাছ আছে আমি
জীবনেও দেখি নাই। অবাক হয়েছি আগর ও ধুপকাঠির সুগন্ধওয়ালা গাছ দেখে।
সোহাগের
সাথে আসা শাহাদাত হোসাইন বলেন, বাগানের পরিবেশ অনেক সুন্দর। কিন্তু বেশ
ঝোপঝাড় হয়ে আছে, সিঁড়ি ও পুকুর পাড়টা পরিচ্ছন্ন রাখলে আরো সুন্দর দেখাবে।
কুমিল্লার
ঠাকুড়পাড়া থেকে আসা বেসরকারি চাকুরিজীবী বিজয়া সেন বলেন, পূজার ছুটিতে
ঘুরতে আসলাম। অনেক ধরনের গাছ আছে। শেখার মত জানার মত অনেক কিছুই আছে-
কিন্তু আরো বেশি গোছানো হলেও মানুষ সবগুলো গাছ খুঁজে পেতে সহজ হত।
তবে
লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে অযত্নের ছাপও। প্রবেশ পথেই যে গোলাপ
বাগান সেখানে শতাধিক রকমের গোলাপ গাছ থাকলেও, দেখে মনে হয়ছে এই প্লটটি ফুল
না আসলে থাকে অযত্নে। এছাড়া ক্যকটাস ও অর্কিডের গ্রীন হাউজে গিয়ে দেখা গেছে
রোদ বৃষ্টিতে শীর্ন দশা। ঝরে পড়ছে ছাউনি।অপর দিকে ছোট্ট পুকুর পাড়ে যাবার
যে সিঁড়ি পাহাড় বেয়ে নেমে গেছে তা শ্যাওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে আছে- যা
দর্শনার্থীদের খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
কুমিল্লা বন বিভাগের প্রধান বন
কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানালেন, কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী লালমাই পাহাড়ে
অবস্থিত এই উদ্ভিদ উদ্যানে বাড়ানো হবে গাছের সংগ্রহ। একই সাথে এই
উদ্যানটিকে বন্য প্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল হিসেবে উপযোগী বাগান হিসেবেও গড়ে
তোলা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এই উদ্যানে বিরল প্রজাতির বাগান, দেশীয়
প্রজাতির বাগান, সৌন্দর্য্যবর্ধক বৃক্ষের বাগান, ভেষজ বৃক্ষের বাগান,
মৌসুমী ফুলের বাহান, হেজ বনায়নও করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির ঘাষের
বনায়ন করা হয়েছে। এছাড়া জলজ উদ্ভিদের সংগ্রহ করা হয়েছে।