প্রতিদিন
বহু মানুষকে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতে হয়। কিন্তু তারা সেখানে কী খাচ্ছে?
অভিযোগ আছে, বেশির ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারই নিম্নমানের। অনেক
রেস্তোরাঁয় পচা-বাসি খাবার পরিবেশন করা হয়। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন
পরিবেশে খাবার তৈরি করা হয়। খাবার সংরক্ষণও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। একই ফ্রিজে
কাঁচা মাছ-মাংস ও রান্না করা খাবার রাখা হয়। খাবারে ক্ষতিকর রং ব্যবহার করা
হয়। পোড়া তেল জমিয়ে রেখে দীর্ঘদিন ধরে তা দিয়ে খাদ্য তৈরি করা হয়। মরা
মুরগিও খাওয়ানো হয় ভোক্তাদের। শুধু ছোটখাটো হোটেল-রেস্তোরাঁই নয়, অনেক
নামি-দামি হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও চলছে একই অনিয়ম। বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ
আদালতের অভিযানেও উঠে এসেছে এমন অনেক অনিয়ম। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের
অভিযান খুবই কম। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিয়মিত পরিদর্শন নেই বললেই চলে।
খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ এই
হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর বিরুদ্ধে শুধু সামান্য জরিমানা নয়, কঠোর ব্যবস্থা
নিতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করেছিল।
খাবারের মান, বিশুদ্ধতা, পরিবেশ, ডেকোরেশন, মনিটরে রান্নাঘরের পরিবেশ দেখার
ব্যবস্থা ও ওয়েটারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ভিত্তিতে রেস্তোরাঁগুলোকে চার
ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করা হয়। ১০০-এর মধ্যে ৯০ নম্বরের বেশি স্কোর হলে ‘এ+’
(সবুজ বর্ণের স্টিকার), স্কোর ৮০ থেকে ৯০-এর মধ্যে হলে ‘এ’ (নীল বর্ণের
স্টিকার), ৫৫ থেকে ৭৯ পর্যন্ত স্কোর হলে ‘বি’ (হলুদ বর্ণের স্টিকার) এবং ৪৫
থেকে ৫৫-এর মধ্যে স্কোর হলে ‘সি’ (কমলা বর্ণের স্টিকার) ক্যাটাগরিভুক্ত
করা হয়। হলুদ স্টিকারধারী রেস্তোরাঁকে তিন মাসের এবং কমলা স্টিকারধারী
রেস্তোরাঁকে এক মাস সময় দেওয়া হয় মানোন্নয়নের জন্য। কিন্তু এই কার্যক্রমও
অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত ৮৭টি
হোটেল-রেস্তোরাঁকে গ্রেডিং প্রদান করা হয়েছে। অথচ শুধু রাজধানীতেই রয়েছে
কয়েক হাজার হোটেল-রেস্তোরাঁ। সব শ্রেণির রেস্তোরাঁর জন্যই রয়েছে ন্যূনতম ২৪
ধরনের বিধি। এর মধ্যে পরিষ্কার রান্নাঘর, রান্না ও বাসনপত্র ধোয়ার কাজে
পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার, রান্নায় ভালো তেল ব্যবহার, পরিবেশনকারীদের
নির্দিষ্ট পোশাক, উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশরুম, প্রশিক্ষিত বাবুর্চি
দিয়ে রেস্তোরাঁ পরিচালনা ইত্যাদি। অথচ বেশির ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁয়ই
স্বাস্থ্য সুরক্ষার ন্যূনতম নিয়ম-কানুনও মানা হয় না। তাহলে এসব বিধি-বিধান
করে লাভ কী?
শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের প্রায় সব হোটেল-রেস্তোরাঁয়ই রয়েছে
অনিয়ম। দু-চার দিনের অভিযানে এসব অনিয়ম দূর হবে না। নিয়মিত অভিযান ও
তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। রেস্তোরাঁর লাইসেন্স দেওয়ার সময়ই রেস্তোরাঁ
পরিচালনার শর্তগুলো যথাসম্ভব যাচাই করে নিতে হবে। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে সঙ্গে
সঙ্গে লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য আইন সংশোধনের
মাধ্যমে হোটেল-রেস্তোরাঁয় অনিয়মের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে।