জীবনের নানা বাঁকে মুমীনের জীবনে হতাশ হবার মতো পরিস্থিতি প্রতি পদে পদেই আসতে পারে। দুঃখ কষ্ট জীবনেই অংশ। এসব এলেই হতাশ হয়ে পড়া কোন মুমীনের লক্ষণ নয়। এগুলো এলে কি করতে হবে তা-ও আল্লাহপাক বাতলে দিয়েছেন।
আল-কোরআনে বলা হয়েছে,
মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে, এরপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নেয়ামত দান করি, তখন সে বলে, এটা তো আমি পূর্বের জানা মতেই প্রাপ্ত হয়েছি। অথচ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না। (সুরা আল জুমার, আয়াত: ৪৯)
সুরা মায়েদার ৭৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
তারা আল্লাহর কাছে তওবা করে না কেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে না কেন? আল্লাহ যে ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সুরা ময়েদা, আয়াত ৭৪)
আর যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়, শুয়ে বসে, দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। তারপর আমি যখন তা থেকে মুক্ত করে দেই, সে কষ্ট যখন চলে যায় তখন মনে হয় কখনো কোন কষ্টেরই সম্মুখীন হয়ে যেন আমাকে ডাকেইনি। এমনিভাবে মনঃপুত হয়েছে নির্ভয় লোকদের যা তারা করেছে। (সুরা ইউনুছ, আয়াত ১২)
বলুনঃ আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে কর, তাদেরকে আহবান কর। অথচ ওরা তো তোমাদের কষ্ট দুর করার ক্ষমতা রাখে না এবং তা পরিবর্তনও করতে পারে না। (সুরা বণী ইসরাইল, আয়াত ৫৬)
আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। ( সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৬)
আপনি বলে দিনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তা থেকে মুক্তি দেন এব সব দুঃখ-বিপদ থেকে। তথাপি তোমরা শেরক কর। ( সূরা আল আন-আম, আয়াত ৬৪)
এবং স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেনঃ আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৩)
হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ২০০)
রাতের পর যেমন দিন, ঠিক তেমনি দুঃখের পর আছে সুখ। কবির এই আসলেই সত্যি, মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূয্য হাসে। কাজেই কোন দুঃখে মুষড়ে পড়া কোন মুসলমানের সাজে না। আল্লাহ বলেন,
নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।
(সুরা আনশিরাহ, আয়াত ৬)
মানুষ যত বড় পাপীই হোক, আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। আপনি যত পাপীই হোন, আর যত দুঃখ কষ্টের মধ্যেই থাকুন না কেন, আল্লাহকে স্মরন করুন। আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, তিনি নিশ্চয়ই আপনার ডাকে সাড়া দেবেন।আল্লাহপাক বলেন,
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।
(সুরা আল মুমিন, আয়াত ৬০)
আল্লাহর প্রতি মুমিনের বিশ্বাস থাকে অটল। দুনিয়ার কোন সুখ দুখ এ বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে না। আর যারা অবিশ্বাসী তারা সত্যি হতভাগা।
আল্লাহ বলেছেন,এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
( সুরা ত্বাহা, আয়াত ১২৪)
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।
(সুরা আন নাহল, আয়াত ৯৭)
মুমিনের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট-
যারা মুমিন তারা একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করবে। আল্লাহই তার জন্যে যথেষ্ট। যে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখে আল্লাহই তার জন্যে যথেষ্ট।
আল্লাহপাক বলেন,এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।
(সুরা আত তালাক্ব, আয়াত ৩)
আল্লাহ্ই ক্ষমাকারীঃ
বান্দা যতবড় অপরাধ করুক, যত বেশী গুনাহ করুক, আল্লাহর রহমতের চাইতে তো বড় নয়। বান্দা সরাসরিই তার প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করতে পারে। এর জন্যে কোন মাধ্যমের প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তার বান্দার কথা সরাসরিই শুনেন। কোন মাধ্যমে নয়। বান্দা যত পাপীই হোক, তাকে ডাকলেই তিনি তার ডাকে সাড়া দেবার অঙ্গিকার করেছেন।
তিনি এরশাদ করেনঃ
“তোমাদের পালনকর্তা বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। নিশ্চয় যারা আমার কাছে দুআ করে না- দুআ করতে অহংকার করে- তারা অচিরেই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (সূরা মু’মেনঃ ৬০)
তিনি আরো বলেনঃএবং যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তখন তাদেরকে বলে দিনঃ নিশ্চয় আমি তাদের সন্নিকটেই। কোন ব্যক্তি যখনই আমাকে আহ্বান করে, তখনই আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে থাকি; সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে, তাহলেই তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।”(সূরা বাকারাঃ ১৮৬)
আল্লাহ্ আরো বলেনঃতিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপরাশী ক্ষমা করেন, আর তোমরা যা কর তিনি তা জানেন।” (সূরা শূরাঃ ২৫)
আল্লাহ্ পাক আরো এরশাদ করেনঃ
“হে মুমিন সমপ্রদায় তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।”(সূরা নূরঃ ৩১)
ভ্রমন করুন, এবং দেখুন দুনিয়ার অবস্থা, আল্লাহর সৃষ্টিকে অবলোকন করুন, এর সামনে আপনার আমার দুঃখ-কষ্ট কতই না ক্ষুদ্র।
আল্লাহপাক বলেন,তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতপর দেখ, মিথ্যারোপ কারীদের পরিণাম কি হয়েছে?
(সুরা আল আন’আম, আয়াত ১১)
আল্লাহপাক বলেছেন,“তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জেহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার”।(সুরা তাওবা, আয়াত ৪১)
প্রতিটি কাজের পরিনাম আল্লাহ স্থির করে রেখেছেন।কাজেই মুমিনের চিন্তিত হবার কোনই কারণ নেই।
আল্লাহ বলেন,“এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন”।
(সুরা আত তালাক্ব, আয়াত ৩)
জান্নাতের কথা স্মরণ করুন। জান্নাতের অনন্ত সময়ের তুলনায় এ পৃথিবী কিছুক্ষণ সময় মাত্র। মুমিন তো বটেই দুনিয়ার সকল প্রানীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। সেই অনন্ত সময়ের জন্যে জান্নাতের কথা স্মরণ করুন। আখেরাতের তুলনায় দুনিয়াবী জীবন মুমিনের কাছে কিছুই নয়।
মহান রাব্বুল আলামিন বলেন,“তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম-গৃহ কতই না চমৎকার”। (সুরা রা’আদ, আয়াত ২৪)
আল্লাহ বলেন,হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর,তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।(সুরা আত তাওবা, আয়াত ৩৮)
মুমিন হলে নিরাশ হবেন না:
আল্লাহ বলেন ”তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে”।
সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৩৯)
দুঃখে ধৈর্য্য ধারন করা মুমিনের লক্ষণ:
আপনি সবর করবেন,আপনার সবর আল্লাহর জন্য ব্যতীত নয়, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না।(সুরা আন নাহল, আয়াত ১২৭)
আমি হুকুম করলাম, তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ৩৮)
আল্লাহ মানুষের অন্তর পরীক্ষা করেন। ধৈর্য্য ধারন করায় আল্লাহপাক মুমিনদের উপর সন্তষ্ট হন। পরিনামে প্রশান্তি নাযিল করেন এবং বিজয় দান করেন।
আল্লাহপাক বলেন,আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন।
(সুরা আল ফাতাহ, আয়াত ১৮)
মানুষকে দুঃখ কষ্ট দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে। এ জীবনে দুঃখ কষ্ট থাকবেই।
নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে তথা কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। (সুরা আল বালাদ, আয়াত ৪)
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,’আর ভালো ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫)
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
‘যদি তোমাদেরকে কোনো আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এইসব দিন আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন করি এবং যাতে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে জেনে নেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে গ্রহণ করেন। আর আল্লাহ যালিমদেরকে ভালোবাসেন না।‘
(সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১৪০)
আল্লাহ তা’আলা আরও সুনির্দষ্ট করে বলেন,
’তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা বিশেষ। আর আল্লাহর নিকটই মহান প্রতিদান।’সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৫)
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। যা হারিয়েছেন, তার জন্যে দুঃখিত হবেন না। আর যা পেয়েছেন তার জন্যে উল্লাসিত হবারও কিছু নেই।
মহান রাব্বুল আলামিন বলেন,এটা এজন্যে বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্যে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন,তজ্জন্যে উল্লসিত না হও। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না, (সুরা আল হাদীদ, আয়াত ২৩)
কঠিন সময়ে আল্লাহর সাহায্য আসবেই। আল-কোরআনে আল্লাহপাক তেমন ঘটনার উল্লেখ করেছেন। কাজেই মুমিন হয়ে থাকলে দুশ্চিন্তা পরিহার করুন।
বিপদে ধৈর্য্য ধারন করার কথা বারংবার বলা হয়েছে। অন্যের দেয়া কষ্ট থেকে আল্লাহ তার মুমিন বান্দাকে অবশ্যই রক্ষা করেন।
মুমিনের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র তিনি নস্যাত করে দেন।বিপদ আপদ ভাগ্যানুসারেই আসে। চিন্তিত হবার কারণ নেই।
পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। (সুরা আল হাদীদ, আয়াত ২২)
“অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের”। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৫)
“যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো”। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৬)
“হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন”। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)
“যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন”। (সুরা আত তালাক্ব, আয়াত ৪)