মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীতে মানুষ প্রেরিত বা সৃষ্টি হয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। এই পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকা চিরস্থায়ী নয় বরং অস্থায়ী। সীমিত জীবনের অনাবিল আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রতিটি মানুষের জীবনেই একটি লক্ষ্য থাকে বা স্বপ্ন থাকে। আর এই ক্ষণিকের জীবনের সার্থকতা বা সফলতা লাভ করতে হলে চাই একটি দৃঢ় সংকল্প। এজন্যই যথাসময়ে বীজ বপন এবং আনুষাঙ্গিক পরিশ্রম ও কঠোর সাধনার দরকার। তেমনি জীবনের স্বপ্ন বা লক্ষ্যকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন সাধনার, প্রয়োজন পরিশ্রমের, প্রয়োজন একটি নির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত পথরেখার। যে পথরেখা সফলতার তোরণ-দুয়ারে উপনীত করবে। আর সেজন্য চাই লক্ষ্য বা স্বপ্ন স্থির করা। যেকোনো কাজ শুরুর আগে সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা করে কাজ করলে কাজের মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকে। যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী না করে তাহলে এর বিপরীত দিক ফুটে ওঠে। কেননা, পরিকল্পনা ছাড়া লক্ষ্য শুধুমাত্র একটি স্বপ্ন।স্বপ্নপূরণের বা সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছা পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেওয়া বা হতাশ হওয়া যাবে না। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সব ধরনের বাধা বিপত্তিকে ধুলিস্যাৎ করে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজের মাঝে একটি বিষয় উপলব্ধি করা যায় যে, তারা স্বপ্ন বা লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে হাল ছেড়ে দেয়। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এমনটি করলে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বাধা বিপত্তি ঘটে। এজন্যই আমাদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কিছু উপায় অবলম্বন করা জরুরী। যার ফলে আমরা অনায়াসে স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাব।
নিজের স্বপ্নটাকে জানতে হবে চিনতে হবে। এমন স্বপ্ন দেখতে হবে যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আসবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে সকল কাজে এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। কেননা অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। স্বপ্নপূরণে আরো একটি বাধা বিপত্তি হিসেবে কাজ করে ভয়। এই ভয় কে জয় করতে হবে আমাদের। ভয়কে জয় করার মধ্য দিয়েই সফলতা অর্জন করা বুদ্ধিমানের কাজ। কাজেই আমাদের মনে কোন ভয়-ভীতি রাখা যাবে না। মনে প্রাণে সেই বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমি পারবো। প্রত্যেকটি কাজে আমাদের তৎপর হতে হবে, উদ্যমী হতে হবে। কারণ তৎপরতা ছাড়া কোন কাজ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না। নিজেকে ভালোবাসুন। নিজের মতাদর্শ কে গুরুত্ব দিন। আমি কী হতে চাই? আমার মন কী চায়? সবকিছু মিলিয়ে নিজের মতাদর্শ কে ভালবেসে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে হবে। অন্যের সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হতে হবে। সফলতার গল্প শুনতে হবে। শুধু সফলতার গল্প ও অনুপ্রাণিত হলেই হবে না। সেই সফলতা ও অনুপ্রেরণার গল্প শোনার মধ্য দিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য নিজের মধ্যে সেই জিদ তৈরি করতে হবে। আর সেই জিদের মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষ স্বভাবতই ভুল করে। সকল কাজে আমরা প্রতিনিয়ত ভুল করি থাকি। ভুল করাটা স্বাভাবিক কিন্তু ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করা টা অস্বাভাবিক। এজন্য আমাদেরকে ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। যে ভুলের মাধ্যমে আমরা স্বপ্ন পূরণে বাধা বিপত্তির আশঙ্কা করছি। সেই ভুলগুলো সংশোধন করে নিজেকে স্বপ্ন পূরণের পথে ধাবিত করতে হবে। স্বপ্ন পূরণের জন্য অন্যতম উপায় হচ্ছে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়া। আমাদের প্রতিটি কাজে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা ছোট ছোট সিদ্ধান্ত কিন্তু স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষ অভ্যাসের দাস। প্রত্যেকটি কাজের যেমন ভালো দিক ও খারাপ দিক রয়েছে। তেমনি অভ্যাসেরও ভালো দিক ও খারাপ দিক রয়েছে। সেজন্য আমাদের ভালো অভ্যাস গুলো গ্রহণ করতে হবে এবং বদঅভ্যাসগুলো পরিহার করতে হবে। ভালো অভ্যাস গুলোর গ্রহণের মাধ্যমে স্বপ্নপূরণের পথে ধাবিত হয়ে নিজেকে সফলতার উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারবে। জীবনে বেঁচে থাকতে হলে বন্ধু-বান্ধবের প্রয়োজন। আর সেই বন্ধুত্ব যদি হয় স্বপ্নপূরণের একটি মাধ্যম। তাহলে সত্যিই সেই বন্ধুত্ব সার্থক। আবার এই বন্ধুত্ব ঘিরে বিভিন্ন অপকর্ম বা স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এজন্যই ভালো বন্ধু গ্রহণ করতে হবে। একটি প্রবাদ বাক্য আছে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
সেই সর্বনাশের পথে যেন আমরা ধাবিত না হই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। সকল কাজে আমাদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে। কোন কাজ শুরুর আগে , এটা আমাকে দিয়ে হবে না, আমি পারবো না, অনেক কঠিন কাজ। এসব নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা থেকে দূরে থাকতে হবে।। শুরুতে যদি আমরা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করি তাহলে স্বপ্ন পূরণ করা যাবে না। কারণ, শুরুতেই মাথায় গেঁথে গেছে আমি পারবো না। তাই আমাদের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে আবদ্ধ হয়ে স্বপ্নপূরণের পথে ধাবিত হতে হবে। তাহলে সম্ভব স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া। তাই পরিশেষে বলা যায়, বিষাক্তময় এই ২০ সাল আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছে। পুরো বিশ্ববাসীকে থমকে দিয়েছে, নিস্তব্ধ করে দিয়েছে। অতীতের গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন বছরের দ্বারপ্রান্তে আমরা। এই নতুন বছরকে ঘিরে সবার মাঝে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা স্বপ্ন থাকে। আর এই নতুন বছরের সূচনা হোক স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। পৃথিবী আবার ফিরে আসুক আগের রূপে। সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধিতে বয়ে আসুক পুরো বিশ্ব জুড়ে। আর এটাই হোক নতুন বছরের প্রত্যাশা।